খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। ৫০০ শয্যার হাসপাতালে রোগী ভর্তি রয়েছে ১ হাজার ৫৫৮। শয্যা না পেয়ে রোগীরা থাকছেন বারান্দা ও সিঁড়ির কোনায়। শয্যা সংকটের পাশাপাশি ভয়াবহ চিকিৎসক সংকটও রয়েছে এ হাসপাতালে। চিকিৎসক সংকটের পাশাপাশি সক্ষমতার তিনগুণের বেশি রোগী নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
দক্ষিণবঙ্গের মানুষের চিকিৎসা সেবার শেষ আশ্রয়স্থল খুলনা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। হাসপাতালটিতে ৫০০ শয্যা থাকলেও প্রতি দিন রোগী আসেন দেড় হাজারের বেশি। আজ রোববারও রোগী ভর্তি ছিলেন ১ হাজার ৫৫৮ জন।
সরেজমিন হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে নির্ধারিত ৪০ বেডের বিপরীতে দুই শতাধিক রোগী ভর্তি। হাসপাতালের নিচতলা থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত ওয়ার্ড, ওয়ার্ডের বারান্দা, বাথরুমের পাশে, এমনকি প্রশাসনিক ব্লকে পরিচালকের কার্যালয়ের মেঝেতেও মাদুর বিছিয়ে শুয়ে আছে রোগী।
হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ৫টি ইউনিট রয়েছে। এর মধ্যে ইউনিট–২–এ দেখা যায়, বেড ৪০টি। তবে রোগী ভর্তি আছে ২৬৫ জন।
হাসপাতালের পরিচালক খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান বলেন, চিকিৎসকের ২৮৮টি পদের মধ্যে ৮১টি শূন্য রয়েছে। আটটি পদের বিপরীতে পাঁচজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট, ৪৪টি পদের বিপরীতে ৩১ জন রেজিস্ট্রার এবং ৯১টি পদের বিপরীতে ৬৩ জন ডেপুটি রেজিস্ট্রার রয়েছেন।
পরিচালক বলেন, এখানে সবচেয়ে বড় সংকট অ্যানেসথেসিয়া বিভাগে। এই বিভাগে ৩৮টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন পাঁচজন চিকিৎসক। হাসপাতালে ১০টি পদের বিপরীতে দু’জন ওটি অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট নিয়োগ করা হয়েছে। ছয়টি পদ থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালে নেই কোনো আইসিইউ অ্যানেস্থেসিওলজিস্ট। ফলে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে ৫ শতাধিক রোগী কোনো না কোনো রোগ নিয়ে অপারেশনের অপেক্ষায় রয়েছেন।
এ ছাড়া বহির্বিভাগে দৈনিক গড়ে দেড় হাজার রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। এই অধিক সংখ্যক রোগীর চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার ৩০ শতাংশ সক্ষমতাও নেই।
এ দিকে সক্ষমতার চেয়ে রোগীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় সুচিকিৎসা পাচ্ছে না রোগীরা। এ ব্যাপারে হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) ডা. সুমন রায় বলেন, ‘শয্যা না থাকায় রোগীদের থকাতে হয় ফ্লোরে। অপারেশনের জন্য দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করতে হয়। রোগীদের প্রয়োজনীয় টেস্ট করতে অপেক্ষা করতে হয়। অনেকে বাইরে থেকে টেস্ট করিয়ে আনেন। ফ্লোরে রেখে রোগীদের সুচিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয়।’
খুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. রবিউল হাসান বলেন, ‘হাসপাতালটি ১ হাজার শয্যা বিশিষ্ট করার প্রস্তাব রয়েছে। খুব শিগগিরই বাস্তবায়ন হতে পারে। এ ছাড়া হাসপাতালে রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের নতুন ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। ভবনটি তৈরি হলে আরও ১৫০টি শয্যা বাড়বে। সে সময় কিছুটা হলেও রোগীদের ভোগান্তি কমবে।’