কুষ্টিয়ায় চাঞ্চল্যকর মা-ছেলেসহ তিন খুনের মামলার একমাত্র আসামি বরখাস্ত এএসআই সৌমেন রায়ের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার শেষ কার্যমুহূর্তে সৌমেন রায়কে আদালতে হাজির করার পর আদালত এই নির্দেশ দেন।
এ সময় কুষ্টিয়ার জেলা ও দায়রা জজ শেখ আবু তাহের ফৌজদারি কার্যবিধির ২৬৫ (ঘ) ধারায় আসামিকে তাঁর তিন খুনের অপরাধ পড়ে শোনান। সৌমেন নিজেকে নির্দোষ দাবি করার পর আদালত তাঁর বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের নির্দেশ দেন। আদালত জানান, আগামী যে কোনো ধার্য তারিখে সাক্ষী গ্রহণ করা হবে।
গত ১৩ জুন ২০২১ রোববার দুপুর ১২টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কাস্টমস মোড়ে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই দিন সৌমেন কথিত স্ত্রী ও তাঁর ৬ বছর বয়সী শিশুসহ তিনজনকে নিজ সরকারি পিস্তল দিয়ে গুলি করে হত্যা করেন।
ঘটনার পর থেকে সৌমেন রায় জেলহাজতে রয়েছেন।
গুলিতে নিহতরা হলেন আসমা খাতুন (৩০) ও তাঁর ছেলে রবিন (৬) এবং সঙ্গে থাকা আসমার বন্ধু শাকিল (৩৫)। এদের মধ্যে আসমা ও তাঁর ছেলে কুমারখালী নাটুরিয়া গ্রামের বাসিন্দা এবং শাকিল সাওতা গ্রামের বাসিন্দা। তাঁরা কুষ্টিয়া শহরে বসবাস করতেন। শাকিল বিকাশের এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। খুনের ঘটনার দিন রাতেই নিহত শাকিল হোসেনের বাবা মেজবার রহমান কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন।
ঘটনার সময় এএসআই সৌমেন রায় খুলনার ফুলতলা থানায় কর্মরত ছিলেন। তাঁর বাড়ি মাগুরা জেলায়। তিনি একসময় কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানায় কর্মরত ছিলেন। কুমারখালী থানায় থাকাকালীন তিনি ওই নারীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ান। পরে তাঁকে বিয়ে করেন বলে দাবি আসমার পরিবারের।
তবে কী কারণে এই হত্যার ঘটনা ঘটে, সেটা পুলিশ এখনো পরিষ্কার না করলেও জানা গেছে, সৌমেন আসমার সন্তান রবিনকে তাঁর মায়ের বাড়িতে রাখতে বলেন। সেখানে রেখে আসমাকে তাঁর সঙ্গে খুলনায় আলাদা বাসায় থাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করে আসছিলেন। আসমা তাঁর ছেলের কথা ভেবে সৌমেনের প্রস্তাবে রাজি হননি। এ সময় তিনি প্রথমে আসমাকে, পরে তাঁর ছেলেকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেন। এ সময় শাকিল ছুটে এলে তাঁকেও তিনি হত্যা করেন।
এ নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞের পর সৌমেন কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রেজাউল করিমের আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন। ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, প্রচণ্ড রাগের মাথায় তিনি এ কাজ করেছেন। তবে ৬ বছরের শিশুটিকে হত্যা করা তাঁর অপরাধ ছিল বলে তিনি আদালতকে জানান।