যশোরের কেশবপুর উপজেলায় প্রথম থানা ভবনে পতাকা উত্তোলন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ গাজী। এখন কথা বলতে পারেন না তিনি। দীর্ঘদিন থেকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় অসুস্থ হয়ে পড়ে আছেন বাড়িতে। কিন্তু তার এই দুঃসময়ে খোঁজ রাখছে না কেই।
বীর এ যোদ্ধার বাড়ি উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামে। এমন অবস্থায় তাঁর কেউ তাঁর খোঁজ না নেওয়া পরিবারের মধ্য সৃষ্টি হয়েছে চাপা ক্ষোভ।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের এই দিনে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ গাজী, চিন্ময় মিত্র, আব্দুল ফকিরসহ মুক্তিযোদ্ধারা রাইফেলের নলে লাল সবুজের পতাকা বেঁধে মিছিল সহকারে কেশবপুরে ফিরে আসেন। ৭ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধাদের আগমনের খবর পেয়ে এ দিন ভোরে কেশবপুর শহরের বালিকা বিদ্যালয়ে অবস্থানরত রাজাকার ও পাকিস্তান সেনাবাহিনী ক্যাম্প ছেড়ে কেশবপুর সর্বজনীন কালী মন্দিরের পাশের ঝোপে অস্ত্র ফেলে পাঁজিয়া, সুফলাকাটি হয়ে খুলনার দিকে পালিয়ে যান। যাওয়ার সময় রাজাকার ও পাকিস্তান বাহিনীর সদস্যরা কানাইডাঙ্গার শেখ লুৎফর রহমান, সুফলাকাটির গৃজানাথ চৌধুরী, তাঁর ছেলে মুক্তি শঙ্কর চৌধুরীসহ কয়েকজন মুক্তিকামী জনগণকে হত্যা করে। এই দিন মুক্তিযোদ্ধারা জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে কেশবপুর থানায় প্রবেশ করেন। এ সময় থানার পতাকা স্ট্যান্ড থেকে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ গাজী পাকিস্তানের পতাকা নামিয়ে পুড়িয়ে ফেলে ওই পতাকা স্ট্যান্ডে বাংলাদেশের ম্যাপ সমৃদ্ধ লাল সবুজের পতাকা প্রথম উত্তোলন করেন। এ সময় কেশবপুর হানাদার মুক্ত ঘোষণা করা হয়। এ দিন কেশবপুরের প্রবেশ পথে ভোগতীনরেন্দ্রপুর কালারবাসা মোড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের অভ্যর্থনা জানান আওয়ামী লীগ নেতা ডাক্তার রওশন আলী, ডাক্তার গোলাম রব্বানি, আনোয়ার হোসেন বিশ্বাস প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ।
উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, কেশবপুরের প্রথম স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ অসুস্থ হয়ে পড়লেও তাঁকে এখন আর কেউ খোঁজ নিতে আসেন না। এ ব্যাপারে তাঁর পরিবারের লোকজন একটা চাপা ক্ষোভ নিয়ে আছেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হামিদ গাজীর স্ত্রী শহর বানু দুঃখ প্রকাশ করে জানান, তাঁর স্বামী অসুস্থ হয়ে পড়ার পর প্রথমদিকে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী রফিকুল ইসলাম ও সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মাদ আলী এসে দেখে গেছেন। এখন কেউ দেখতে আসেন না।