খুলনা প্রতিনিধি
ঘূর্ণিঝড় রিমালে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলার ৩২ হাজার ৯৫৯ হেক্টর চিংড়ির ঘের ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘেরগুলোতে চাষ করা ৭ হাজার ৬৩০ টন চিংড়ি, ১ হাজার ১৭১ লাখ চিংড়ি পোনা, ১৫ হাজার ৫৭৮ টন সাদা মাছ ও ১৭২ টন কুঁচে ভেসে গেছে। সব মিলিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ ৭৭২ কোটি ১৭ লাখ টাকা। সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলে চলতি বছর চিংড়িসহ সাদা মাছের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে আসার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়ার আশঙ্কা রয়েছে চিংড়ি রপ্তানি খাতে।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ঘূর্ণিঝড় রিমালে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় ৪০ হাজার ৫১৫টি মাছের ঘের এবং ৮ হাজার ১০০টি পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় ৯ হাজার, বাগেরহাটে ২ হাজার ৭০০ ও সাতক্ষীরায় ৩ হাজার ৯০০ মাছের ঘের লবণপানিতে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া ওই তিন জেলায় ৮ হাজার ১০০টি পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ সময় বেড়িবাঁধ ভেঙে সাদা মাছের পাশাপাশি বহু চিংড়ি নদীতে ভেসে গেছে। এতে শুধু চিংড়ি খাতে প্রাথমিকভাবে ক্ষতি হয়েছে ৩৩২ কোটি টাকা।
পাইকগাছা উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের মাছ চাষিরা জানান, ঘূর্ণিঝড়ে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ ভেঙে বিপুল পরিমাণ সাদা মাছ ও চিংড়ি নদীতে ভেসে গেছে। এতে চাষিদের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএফএ) পরিচালক এম এ হাসান পান্না বলেন, ‘এমনিতেই এখনো চিংড়ির উৎপাদন কম। এ কারণে প্রতিবছর আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। তার ওপর ঘূর্ণিঝড় রিমালে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে সাদা মাছের সঙ্গে বহু চিংড়ি ঘের ভেসে গেছে। এতে হাজার কোটি টাকার ওপর ক্ষতি হয়েছে।’
খুলনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা জয়দেব কুমার পাল বলেন, চাষিদের ফের ঘুরে দাঁড়াতে হলে ঘের থেকে জলোচ্ছ্বাসের পানি সরে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘের প্রস্তুত করে ভর্তুকি মূল্যে পোনা সরবরাহ করতে হবে। কারণ, যেসব চাষি ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁদের টাকাপয়সা তো সব ঘেরে শেষ হয়ে গেছে। তাঁদের আর্থিকভাবে সাহায্য প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, ২০২২-২৩ অর্থবছরে খুলনা, বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলায় ১ লাখ ২৫ হাজার টন চিংড়ি উৎপাদন হয়েছিল। যেখান থেকে রপ্তানিযোগ্য চিংড়ি বিদেশে রপ্তানি করে ২ হাজার ৪১২ কোটি টাকা বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়েছিল।