খুলনা প্রতিনিধি
ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি বাংলাদেশি জাহাজ ‘এমভি আবদুল্লাহ’র সেকেন্ড ইঞ্জিনিয়ার খুলনার মো. তৌফিকুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার দিন কাটাচ্ছেন। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে জিম্মি হওয়ার ঘটনা জানার পর থেকে দুশ্চিন্তা কাটছে না তাঁদের। তৌফিকের সাত বছর বয়সী মেয়ে তাসফিয়া তাহসিনা ও পাঁচ বছর বয়সী ছেলে আহমদ মুসাফি বাবার জিম্মি হওয়ার খবর শোনার পর থেকেই অঝোরে কাঁদছে।
জলদস্যুদের হাতে জিম্মি মো. তৌফিকুল ইসলাম খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা থানার ২০/১ করিমনগর এলাকার মো. ইকবাল এবং দিল আফরোজা দম্পতির ছেলে। তিন ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার ছোট।
আজ বুধবার দুপুরে তৌফিকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই কানে আসে কান্নার আওয়াজ। দুই সন্তানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছিলেন তৌফিকুলের স্ত্রী জোবাইদা নোমান। পাশে বসে শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছছেন জোবাইদার শাশুড়ি দিল আফরোজা। বয়স ৭০ ছাড়িয়েছে।
জোবাইদা নোমান বলেন, মঙ্গলবার বিকেলে শাশুড়ি মায়ের সঙ্গে কথা বলার আগে বেলা ২টার দিকে স্বামী তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ হয়। এ সময় তৌফিক জলদস্যুদের কবলে পড়ার বিষয়টি মা-বাবাকে জানাতে নিষেধ করেন। তাঁর জন্য শুধু দোয়া করতে বলেন।
জোবাইদা বলেন, ‘দুপুর ২টায় ও প্রথমে ফোন দিয়ে জানায়, আমাদের জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়েছে। আমাদের ইঞ্জিন বন্ধ করে দিতে হইছে। ক্যাপ্টেন স্যারকে ক্যাপচার করে নিছে। দোয়া করো। আমাকে মাফ করে দিও। পরে বিকেল ৫টায় আবার ফোন দিয়ে বলেছে, আমাদের সোমালিয়ায় যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। এখন আমরা সোমালিয়ার উদ্দেশে রওনা দিচ্ছি। যেতে তিন দিন লাগবে। তার পর থেকে আর যোগাযোগ নেই। সে কীভাবে আছে, জানি না। ২০০৮ সাল থেকে আমার স্বামী জাহাজে চাকরি করলেও এ ধরনের বিপদে এই প্রথমবার পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘ওরা (জলদস্যুরা) এখনো কোনো দাবি জানায়নি। এ বিষয়ে কোনো সংবাদও আমরা পাইনি।’
কাঁদতে কাঁদতে তৌফিকের মা দিল আফরোজা বলেন, ‘ছেলেকে জিম্মি করার কথা শোনার পর তাকে কয়েকটি দোয়া পড়ার কথা বলি। তখন সে আমাদের সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। কথা বলার একপর্যায়ে জলদস্যুরা তার ফোন কেড়ে নেয়।’
তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার বিকেল ৫টায় ফোন করে প্রথমে বলে আম্মা কেমন আছে? আমি বলি, তুমি কেমন আছ সেটা বলো। শুনলাম তোমাদের নাকি আটকায় রাখছে। বলল, ভালো আছি। ভালো আছ, তারপরেও একটি দোয়ার কথা বলে তাকে পড়তে বললাম। বললাম দোয়াটি তোমাদের সবার কাজে লাগবে। এরপর সে আম্মা বলল, আর তখনই মোবাইলটি কেড়ে নিছে। তার পর থেকে তার সঙ্গে আর কথা বলতে পারিনি। ছেলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকলে অন্তত স্বস্তিতে থাকতে পারতাম। গত ২৫ নভেম্বর সে বাড়ি থেকে চট্টগ্রামে ওই জাহাজে গিয়েছিল।’