হোম > সারা দেশ > খুলনা

আজহারীর মাহফিলে অসংখ্য মানুষের স্বর্ণালংকার-মোবাইল খোয়া, থানায় জিডির হিড়িক

­যশোর প্রতিনিধি

প্রকাশ: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭: ২৫
আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ১৭: ২৫
যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় জিডির জন্য হিড়িক পড়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

যশোরে ড. মিজানুর রহমান আজহারীর ওয়াজ মাহফিলে গিয়ে অসংখ্য মানুষের মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার খোয়া গেছে। গতকাল শুক্রবার রাতে শহরতলি পুলেটহাটের আদ্‌-দ্বীন সকিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চত্বর ও আশপাশ এলাকায় এ ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার পর থেকে যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় ভুক্তভোগীরা জিডি করতে রীতিমতো লাইন ধরেছেন।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানা-পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, আজ শনিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত মাহফিলে মোবাইল ও স্বর্ণালংকার খোয়া যাওয়ার ঘটনায় ৩০০ জিডি হয়েছে। এখনো যেভাবে জিডি করতে ভুক্তভোগীরা থানায় আসছেন তাতে এই সংখ্যা কয়েক গুণ বাড়বে বলে ধারণা করছে পুলিশ।

যশোর শহরতলি পুলেরহাটের আদ্-দ্বীন ফাউন্ডেশন আয়োজিত তিন দিনব্যাপী তাফসিরুল কোরআন মাহফিলের শেষ দিন ছিল গতকাল। এদিন রাতে বক্তব্য দেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিমান বক্তা মিজানুর রহমান আজহারী। তাঁর আসার খবরে ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের ঢল নামে মাহফিল এলাকায়। গতকাল সকালে থেকেই শীত উপেক্ষা করে মানুষ জমায়েত হয়। বিকেল থেকে মাহফিল স্থান ছাপিয়ে সড়ক-মহাসড়কেও শিশু, নারী, পুরুষের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। দুপুরের পর সড়কে যানজট দেখা দেয়। এ জন্য অনেকেই হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছায়। সব সড়কের ঢেউ গিয়ে মিশে পুলেরহাটে। মাহফিল প্রাঙ্গণে পাঁচ থেকে সাত লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। এদিন সন্ধ্যায় আস সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শায়খ আহমাদুল্লাহও বক্তব্য দেন।

রাত সাড়ে ১০টার পর মাহফিল শেষ হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে পদদলিত হয়ে একাধিক ব্যক্তি মারা যাওয়ার খবর। আহতের সংখ্যাও অর্ধশতাধিক। এ ছাড়া মোবাইল, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার খবর।

তবে হাসপাতাল জানা গেছে, যশোর জেনারেল হাসপাতালে পদদলিত হয়ে ২১ জন ভর্তি হওয়ার খবর জানা গেছে। এর মধ্যে রাতেই ১০ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। আর ১১ জনের অবস্থা গুরুতর হওয়াতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ডিউটি অফিসার শারমিন আক্তার জানিয়েছেন, গতকাল গভীর রাত থেকে আজ শনিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত স্বর্ণালংকার ও মোবাইল খোয়া যাওয়ার ঘটনায় ৩০০ জিডি হয়েছে।

তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুক্রবার রাত থেকে অসংখ্য মানুষ মোবাইল হারিয়ে যাওয়া বা চুরির ঘটনায় জিডি করতে আসেন। তাৎক্ষণিক যাঁরা মোবাইলের ডকুমেন্ট দেখাতে পেরেছেন, তাঁরা জিডি করতে পেরেছেন। আর আজ শনিবার সকাল থেকে রীতিমতো ভিড় লেগেছে। জিডির সংখ্যা কয়েক হাজারে দাঁড়াবে বলে ধারণা করছি।’

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় জিডির জন্য হিড়িক পড়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

মায়ের দেড় ভরি ওজনের একটি গলার হার খোয়া যাওয়ায় আজ দুপুরে থানায় জিডি করতে এসেছেন সদরের রূপদিয়া থেকে ইব্রাহিম হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমরা মা মহিলা প্যান্ডেলে বসে আজহারী হুজুরের ওয়াজ শুনছিলেন। একপর্যায়ে গলায় হাত দিয়ে দেখেন তাঁর গলায় হার নেই। তাই থানায় জিডি করতে এসেছি।’

বউয়ের গলার চেইন হারিয়ে যাওয়ার পর থানায় জিডি করতে আসেন শহরতলি নওয়াপাড়া এলাকার বাসিন্দা হয়রত হোসেন। তিনি বলেন, ‘এভাবে ওয়াজ মাহফিলে চুরির ঘটনা দুঃখজনক এবং অপরাধমূলক কাজ। লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয়েছে গতকাল। চোরেরা এ ধরনের অনুষ্ঠানেও সুযোগ নেয়। কর্তৃপক্ষের আরও সতর্ক ও ব্যবস্থাপনা ভালো করা উচিত ছিল। আর আমাদেরও সচেতন হওয়া উচিত ছিল, ব্যাপক সমাগমের স্থানে দামি জিনিসপত্র পরিধান ও নিয়ে যাওয়া উচিত হয়নি।’

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় জিডির জন্য হিড়িক পড়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

শহরের বেজপাড়া এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, ‘যশোরের ইতিহাসে এত বড় মাহফিল হয়নি। ওয়াজ মাহফিলে গিয়েছিলাম ইমান-আমল ঠিক করতে। আর চোরেরা তাদের ব্যবসা করল। হাজার হাজার মানুষের মোবাইল হারিয়ে যাওয়ার খবর শুনেছি মাহফিলের মাঠেই। অনেকেই দূরদূরান্ত থেকে এসেছেন, তাই জিডি করতে কাগজপত্র দেখাতে না পারায় জিডি করতে পারছেন না। যারা চুরির মতো এ ধরনের কাজ করছে মাহফিলে; তারা মাহফিলের সৌন্দর্য নষ্ট করেছে। তাদের বিচার হওয়া উচিত।’

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘তিন দিনব্যাপী বৃহৎ মাহফিল হয়েছে যশোরে। পাঁচ থেকে সাত লক্ষ মানুষ সমাগম হয়েছে। এর ভেতরে অসংখ্য মানুষের মোবাইল, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র হারিয়ে যাওয়ার খবর পেয়েছি। অনেকেই জিডি করছেন। কয়েকটি চুরির অভিযোগও পেয়েছি। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।’

যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় জিডির জন্য হিড়িক পড়েছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

ওসি আরও বলেন, ‘মাহফিলে আহত বা মৃত্যু নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। মাহফিলে পদদলিত হয়ে মারা যাওয়ার কোনো ঘটনা ঘটেনি।’ মৃত্যু নিয়ে গুজব না ছড়ানোর অনুরোধ করেন পুলিশের এই কর্মকর্তা।

প্রসঙ্গত, ১ জানুয়ারি (বুধবার) থেকে তিন দিনব্যাপী এই মাহফিল শুরু হয়। মাহফিলের প্রথম দিন বুধবার আলোচনা করেন আল্লামা মামুনুল হক ও আব্দুল হাই মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিন আলোচনা করেন মাওলানা রফিকুল ইসলাম মাদানী ও মুফতি আমির হামজা। শেষ দিন শুক্রবার আলোচনা করেন শায়খ আহমাদুল্লাহ ও ড. মিজানুর রহমান আজহারী।

দ্রুতগতির ২ মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে কিশোর নিহত, আহত ১

ওবায়দুল কাদের–শেখ হেলাল পালিয়েছেন যশোর যুবদল নেতার সহযোগিতায়, দাবি সাবেক নেতার

শরণখোলায় জেলের লাশ উদ্ধার

বেনাপোল-পেট্রাপোল বাণিজ্য নিরাপত্তায় স্থাপিত স্ক্যানার পরিদর্শনে এনবিআরের মোস্তাফিজুর