মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ১২ মুক্তিকামী স্মরণে যশোরের মনিরামপুরের কপালিয়া বাজারের বধ্যভূমি দখলে নিয়ে কার্যালয় নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে। উপজেলার মনোহরপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি জাহিদুজ্জামান জাহিদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে।
যুবলীগ নেতার তৈরি স্থাপনা ভেঙে বধ্যভূমি রক্ষার দাবিতে শহীদদের পরিবারের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে উপজেলা প্রশাসনসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। তবে যুবলীগ নেতা জাহিদুজ্জামান জাহিদের দাবি, বধ্যভূমির জায়গা অরক্ষিত থাকায় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তিনি নিজেই রক্ষার উদ্যোগ নিয়েছেন।
কপালিয়া অঞ্চলের স্থানীয়রা বলছেন, ১৯৭১ সালে দেশ স্বাধীনের ১৫-২০ দিন আগে এক বিকেলে স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজলু সরদার, গোলজার সরদার, আব্দুস সামাদ সরদার, আনছার মোল্লা, ওয়াজেদ আলী মোল্লা, জোনাব আলী মোল্লাসহ ১২ জনকে ধরে পাশের কাচারিবাড়িতে নিজেদের ঘাঁটিতে নিয়ে যায়। পরে রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্যরা মধ্যরাতে ঘাঁটি থেকে এনে কপালিয়া বাজারসংলগ্ন শ্রী নদের খেয়াঘাটে তাঁদের গুলি করে হত্যা করে।
২০১১ সালের ১৬ ডিসেম্বর শহীদ ১২ জনের স্মরণে মনোহরপুর কপালিয়া শহীদ স্মৃতি রক্ষা পরিষদের উদ্যোগে কপালিয়া বাজারের ওই স্থানে স্মৃতিফলক নির্মাণ করা হয়। জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ অধ্যক্ষ শেখ আব্দুল ওহাব বধ্যভূমির স্মৃতিফলক উদ্বোধন করেন।
গতকাল সোমবার কপালিয়া বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বধ্যভূমির স্মৃতিফলকের চারপাশে ইটের খুঁটি নির্মাণ করা হয়েছে। তার ওপর ত্রিপল দিয়ে ঘেরা রয়েছে। এর মধ্যে বসার জন্য প্লাস্টিকের কয়েকটি চেয়ার রাখা আছে। সেখানে অবস্থান করছেন যুবলীগ নেতা জাহিদুজ্জামান জাহিদ।
শহীদদের স্বজনদের মধ্যে অভিযোগকারী একজন শামছুর মোল্লা। তিনি বলেন, শ্রী নদের খেয়াঘাটে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে নিহত ১২ জনের মধ্যে আমার তিন ভাই রয়েছে। দেশ স্বাধীনের ৫২ বছর পার হলেও তাঁরা স্বীকৃতি পাননি। সাবেক হুইপ শেখ আব্দুল ওহাব কপালিয়া বাজারে শহীদদের স্মরণে বধ্যভূমিতে একটি স্মৃতিফলক স্থাপন করেছিলেন। সেটাও আজ আর থাকল না। যুবলীগ নেতা জাহিদ ও তাঁর এক চাচা বধ্যভূমি দখলে নিয়ে পাকা ঘর করছেন।
শামছুর মোল্লা আরও বলেন, ‘আমি আওয়ামী লীগের রাজনীতি করি। বধ্যভূমির পাশে কপালিয়া বাজারে দলীয় কার্যালয় আছে। তার পরও ওরা দুজন বধ্যভূমির জায়গা দখলে নিয়েছে। আমরা অভিযোগ করেছি, সেটা টের পেয়ে ওরা এখন ওপরে তাঁবু দিয়ে ঘিরে নির্বাচনী অফিস করেছে।’
তবে অভিযোগের বিষয়ে যুবলীগ নেতা জাহিদুজ্জামান জাহিদ বলেন, ‘বধ্যভূমির স্থানে লোকজন ময়লা ফেলত। আমি উদ্যোগ নিয়ে ময়লা পরিষ্কার করে বধ্যভূমি রক্ষা করছি। এখানে কোনো অফিস হবে না, ঘর ভাড়াও দেওয়া হবে না। যাঁরা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা মিথ্যা বলছেন।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এসংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’