‘আর কয় দিন বাঁচপো। এ পর্যন্ত এটটা (একটা) ভোট দিতি পারলাম না। শুনছি হাসিনা সরকার কত সুযোগ সুবিদে দিচ্ছে। কত মানুষ সরকারি ঘর পাইছে। আমি কিছুই পাচ্ছিনে। এটটা ভাতা পাতাম তা-ও বন্ধ করে দেছে।’ এভাবে ঘর না পাওয়ার কথা বলছিলেন মাগুরার মহম্মদপুর উপজেলা সদরের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়ার বাসিন্দা মনোদা রানি সরকার।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, মনোদা রানি সরকারের স্বামী শান্তিরাম সরকার মারা গেছেন ১১ বছর আগে। বিধবা হতদরিদ্র এই নারী ভোটার হতে না পারায় বঞ্চিত হচ্ছেন সরকারি নানা সুযোগ-সুবিধা থেকে। আগে বয়স্ক ভাতা পেলেও জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় ভাতাও বন্ধ হয়ে গেছে।
উপজেলা সদরের পশু হাসপাতালের পাশে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পাড়ায় বসবাস করেন মনোদা রানি সরকার। সরেজমিনে দেখা যায়, স্বামী মারা যাওয়ার পর চার ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে ঝুপড়ির মতো একটি ঘরে বসবাস করছেন মনোদা। তাঁর ছেলেরা খাদ্যগুদামে ধান, চাল ও গমের বস্তা টানার কাজ করেন। নিজের কোনো জমি না থাকায় সরকারি জমিতে বসবাস করছেন পরিবার নিয়ে।
ভোটার না হওয়ার বিষয়ে আজকের পত্রিকাকে জানান, ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন, স্বামীর জাতীয় পরিচয়পত্র, চেয়ারম্যানের সুপারিশসহ নানা জটিলতায় এখনো ভোটার হতে পারেননি তিনি। এসব বিষয়ে কেউ কখনো সহযোগিতা করেনি বলে অভিযোগ করেন মনোদা রানি সরকার।
মনোদা রানি সরকারের বড় ছেলে সুশান্ত কুমার সরকার বলেন, ‘আমরা চার ভাই খাদ্যগুদামে ধান, চাল ও গমের বস্তা টানার কাজ করি। সংসার চালাতে কষ্ট হচ্ছে আমাদের। অভাবের সংসারে খেয়ে না খেয়ে দিন কাটে। মা ভোটার হতে পারলে সরকারের সহযোগিতা পাব। তাতে সংসারের উপকার হবে।’
ভোটারের বিষয়ে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তাইজুল ইসলাম বলেন, ‘এখন নতুন ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রম চলছে। নতুন ভোটার হতে অনলাইন জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক। আমরা নিজেদের উদ্যোগে বৃদ্ধ এই নারীকে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে কাগজপত্র সংগ্রহ করছি। বিষয়টির দ্রুত সমাধান হবে বলে আমরা আশা করছি।’
এদিকে বয়স্ক ভাতার বিষয়ে মহম্মদপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা কাজী জয়নূর রহমান বলেন, ‘মনোদা রানি সরকার বয়স্ক ভাতা (ন-৭৪৫) পেতেন। পরে এনআইডি কার্ড না থাকায় যাচাইবাছাইয়ে তাঁর কার্ডটি বাদ যায়।’
ভোটারের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রামানন্দ পালের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মনোদা রানি সরকার যাতে ভোটার হতে পারেন আমি সেই ব্যবস্থা করব।’