কেউ বলে বাংলার মাইকেল জ্যাকসন, আবার কেউ বলে খুলনার মাইকেল জ্যাকসন। পপসম্রাট মাইকেল জ্যাকসনের মতো নেচেগেয়ে পথেঘাটে ঘটি গরম চিড়া ও চানাচুর বিক্রি করেন তিনি। বলছিলাম খুলনার দৌলতপুর এলাকার মো. বিল্লাল ব্যাপারীর কথা। তাঁর চুল ও পোশাক আসল মাইকেল জ্যাকসনের মতো। বিখ্যাত সব পপ গানের সঙ্গে জ্যাকসনের অনুকরণে নাচ দেখাতে পারদর্শী তিনি।
ছোটবেলা থেকেই মাইকেল জ্যাকসনের ভক্ত বিল্লাল। বিখ্যাত সব পপ গানের সঙ্গে মাইকেল জ্যাকসনকে অনুকরণ করে খুলনা শহরের বিভিন্ন জায়গায় নাচ দেখান তিনি। শুধু নাচ দেখানোই তাঁর কাজ নয়, মাইকেল জ্যাকসনের নাচের তালে তালে ক্রেতাদের বিনোদন দেওয়ার সঙ্গে বিক্রি করেন ঘটি গরম চিড়া ও চানাচুর।
পপ গানের সঙ্গে তাঁর এই নাচ দেখতে ভিড় জমায় সাধারণ মানুষ। তবে চানাচুর কেনার চেয়ে বিনোদনের জন্য লোকজন ভিড় করে বেশি। বিল্লালের নাচ দেখে মুগ্ধ হয় সবাই। এভাবে ঘটি গরম চিড়া ও চানাচুর বিক্রি করে দিনে প্রায় ৫০০ টাকা আয় করেন বিল্লাল। তবে রমজান মাসে একমাত্র আয়ের উৎসটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কষ্টে দিন যাচ্ছে তাঁর।
বিল্লাল বলেন, ‘পপসম্রাট মাইকেল জ্যাকসন পৃথিবীতে আর কখনো জন্ম নেবে না। আমি ছোটবেলা থেকেই তাঁর ভক্ত। মাইকেল জ্যাকসনের প্রতি ভালোবাসা আজ আমার কাজের সঙ্গেও মিশে গেছে।’
নাচের বিষয়ে বিল্লালের কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই বা নেই কোনো প্রশিক্ষকও। নিজের প্রচেষ্টায় শিখেছেন মাইকেল জ্যাকসনের মতো নাচ। বনভোজন, গায়েহলুদ, পারিবারিক অনুষ্ঠান ও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে মাঝেমধ্যে ডাক পড়ে তাঁর। সেখানে দর্শকদের বিনোদন দেন তিনি।
সাধারণ মানুষের কাছে বেশ জনপ্রিয় বাংলার মাইকেল জ্যাকসন বিল্লাল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইউটিউবে রয়েছে তাঁর অনেক অনুসারী। সেখানে নিয়মিত নাচের ভিডিও আপলোড করেন তিনি।
বিল্লাল নিয়মিত অন্যদের বিনোদন দিলেও তাঁর জীবন কাটছে আর্থিক অসচ্ছলতার মধ্যে। অভাব-অনটনের মধ্যেও রাস্তায় হাসিমুখে নাচ-গান করে যান তিনি। আগে একটি পাট গোডাউনে সিকিউরিটি গার্ডের খণ্ডকালীন চাকরি করলেও তা এখন নেই। এখন আয়ের উৎস শুধু চানাচুর বিক্রি। মাইকেল জ্যাকসনের সাজে ৯ বছর আগে ঘটি গরম চানাচুর বিক্রি শুরু করেন। তবে রমজান মাসে বন্ধ হয়ে গেছে তাঁর একমাত্র আয়ের উৎসটি।
বিল্লাল বলেন, ‘রমজানে ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সংসার চালাতে অনেক কষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কেউ একটিবার খবর নেয় না। সবাই স্বার্থপর। প্রতিভা থাকতেও আজ পর্যন্ত ভালো কোনো প্ল্যাটফর্ম পাইনি। আমাকে সবাই ব্যবহার করে, কিন্তু কেউ সহযোগিতার হাত বাড়ায় না।’
আক্ষেপের সুরে বিল্লাল বলেন, ‘আমাকে নিয়ে নাটক বানানো হয়েছে। কিন্তু আমার কাছে কেউ আসে না। অনলাইন থেকেও এই পর্যন্ত আমি কোনো আয় করতে পারিনি। কিন্তু আমাকে দিয়ে অনেকে আয় করছে। সবাই ব্যবহার করে আমাকে। দুর্দিনে কেউ পাশে নাই।’
এ বিষয়ে নগরীর ৪ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো. কবির হোসেন কবু মোল্লা বলেন, ‘বিল্লাল ব্যাপারীর মধ্যে অসাধারণ প্রতিভা রয়েছে। উপযুক্ত প্ল্যাটফর্ম পেলে সে তার প্রতিভা বিকশিত করার সুযোগ পাবে। আমি অনুরোধ করব সমাজের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গ ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে সহযোগিতায় এগিয়ে আসতে।’