যশোর প্রতিনিধি
পরিবারের সচ্ছলতা ফেরাতে দুই মাস আগে বাড়ি থেকে চাকরির উদ্দেশ্যে বের হন কামরুল হাবিব রকি (২১)। মামার সহযোগিতায় চাকরি পান রাজধানীর বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্তোরাঁয়। কাজ শুরু করেন ক্যাশিয়ার পদে। সবকিছু ঠিকভাবেই যাচ্ছিল, কিন্তু গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে রেস্তোরাঁয় লাগা আগুনে মারা যান তিনি। নিমেষেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় রকিকে নিয়ে দেখা পরিবারের স্বপ্ন।
আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে রকির মরদেহ পৌঁছায় গ্রামের বাড়ি যশোর সদর উপজেলার ধোপাখোলা কামার পাড়ায়। এ সময় স্বজন ও প্রতিবেশীরা ভিড় করেন এক নজর দেখার জন্য। তাঁদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে গোটা এলাকা।
শুক্রবার দুপুরে নিহত রকিবের বাড়িতে দেখা গেছে, দুর-দুরান্ত থেকে আত্মীয়-স্বজনেরা রকির বাড়িতে ভিড় করছেন। বাড়ির উঠানে খাটিয়ার রকির মরদেহ। তাঁকে ঘিরেই স্বজনেরা চেয়ারে বসে আছেন। একটু দূরেই চেয়ারে দাদি রেহেনা বেগম আহাজারি করছেন। এর একটু দূরে রকির মা রিপা খাতুন বিলাপ করছেন। নিকট আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা তাঁকে ঘিরে সান্ত্বনা দিচ্ছেন।
বিলাপ করে মা রিপা খাতুন বলতে লাগলেন, ‘তুমি (রকি) না বলেছিলে আমার ছাড়া থাকতে পারবা না। কেন তুমি আমারে ছেড়ে চলে গেলে। আমারে খুব ভালোবাসত সে। আমি অসুস্থ হলে আমার সকল কাজে সহযোগিতা করত।’
নিহত রকির ভাই কামরান হোসেন সাজিম বলেন, ভাই আলিম পাস করে গত ডিসেম্বর মাসে কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে ক্যাশিয়ার পদে চাকরি নেন। বৃহস্পতিবার সেখানে কর্মরত অবস্থায় আগুন লাগে। তিনি ভবনের ভেতরে আটকা পড়েন। তাঁকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার মারা যান। আগুনের ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়েই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। আজ সকালে মরদেহ বাড়িতে এসেছে।
‘আমাদের তিন ভাইয়ের মধ্যে রকি সবার বড়। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে চাকরি করে সংসারের হাল ধরেছিলেন। বাবা ইজিবাইক চালিয়ে সংসার চালায়। তাঁদের দুজনের আয়ে আমাদের সংসার চলত। ভাইকে এভাবে হারাতে হবে কখনো কল্পনাই করিনি।’ বলেন, কামরান হোসেন সাজিম।
তিনি বলেন, ‘আমিই রকিকে ঢাকায় নিয়ে গিয়েছিলাম। ওর চাকরির পর আমিই ঢাকা চিনিয়েছি। গত ডিসেম্বরে রকি চাকরিতে ঢুকেছে। আজ ওর লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরলাম।’
এদিকে স্বজন ও প্রতিবেশীরা রকি স্মৃতিচারণ করে দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন। সবাই সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা হারিয়েন। রকির মা রিপা বেগম ও বাবা কবির হোসেন সন্তানের শোক বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। শুধু সন্তানের জন্য মাতম করছেন তাঁরা। বাদ জুমা স্থানীয় মসজিদে জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়েছে।