যশোরের মনিরামপুরে পরীক্ষার কক্ষে নকল নিয়ে ধরা পড়ার পর সুইসাইড নোট লিখে কলেজছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনার সরেজমিন তদন্তে যান জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। এ সময় তাঁদের সামনে কলেজের অধ্যক্ষকে জুতা-ডিম ছুড়ে এবং মারধর করেছেন স্থানীয় কিছু লোকজন। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।
শুধু তা-ই নয়, বিক্ষুব্ধদের ঠেকাতে গিয়ে আহত হয়েছেন কলেজের শিক্ষক, কর্মচারীসহ অন্তত ১৫ জন। আজ বুধবার দুপুরে উপজেলার গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে এ ঘটনা ঘটে।
ওই কলেজের আহত শিক্ষক চিন্ময় কুন্ডু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আজ বুধবার কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির নির্বাচনী পরীক্ষা চলছিল। এর মধ্যে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল হোসেন ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা তদন্ত করতে কলেজে আসেন। তাঁরা অধ্যক্ষের কক্ষে ঢুকতেই বাইরে থেকে একদল নারী-পুরুষ কলেজ চত্বরে ঢুকে পড়েন। বাইরের লোকজনের সঙ্গে আমাদের কলেজের বর্তমান-পুরোনো কিছু শিক্ষার্থী ছিল।’
তিনি বলেন, ‘কলেজ চত্বরে লাঠিসোঁটা, পচা ডিম, টমেটো ও জুতা নিয়ে তারা সরাসরি অধ্যক্ষের কক্ষে ঢোকার চেষ্টা করে। তখন আমরা শিক্ষক-কর্মচারীরা অধ্যক্ষের কক্ষের প্রবেশপথে বেষ্টনী দিই। হামলাকারীরা বাধা পেয়ে আমাদের লাঠি দিয়ে আঘাত করে। শিক্ষকদের মুখে জুতা দিয়ে মেরেছে। আমাদের ওপর ডিম ও টমেটো ছুড়ে মেরেছে। দুই তিনজন কর্মচারীর জামা টেনে ছিঁড়ে দিয়েছেন। এতে আমরা অন্তত ১৫ জন মারধরের শিকার হয়েছি। তাঁরা পিটিয়ে কয়েকটি চেয়ার ভেঙেছে।’
ভুক্তভোগী এ শিক্ষক বলেন, ‘একপর্যায়ে বাধা ভেঙে দুই নারীসহ কয়েকজন ডিম ও জুতা নিয়ে ভেতরে ঢুকে অধ্যক্ষের ওপর হামলা করেছে। তারা অধ্যক্ষকে কিল-ঘুষি মেরেছে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।’
এমন পরিস্থিতির শিকার হয়ে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা সবাই প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা নিয়েছি। আমাদের ওপর হামলার ঘটনার সঠিক বিচার না হওয়া পর্যন্ত, আমরা কেউ প্রতিষ্ঠানে না ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
এ বিষয়ে গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ রেজাউল করিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘যা শুনেছেন সব সত্যি। আমি মানসিকভাবে অসুস্থ। কারও সঙ্গে কোনো কথা বলতে চাই না।’
পরিস্থিতি সম্পর্কে নেহালপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল হান্নান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করেছি।’
তবে এ বিষয়ে হামলাকারী বা নিহত ছাত্রীর স্বজনদের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, গত ৩০ মার্চ গোপালপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নির্বাচনী পরীক্ষা শুরু হয়। প্রথম দিনে ইংরেজি দ্বিতীয়পত্রের পরীক্ষায় নকল করতে গিয়ে ধরা পড়ে সাবিনা ইয়াসমিন নামে এক পরীক্ষার্থী। পরে বাড়ি ফিরে সুইসাইড নোট লিখে ওই দিন দুপুরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে সাবিনা। এর পর থেকে নিহত ছাত্রীর স্বজন, সহপাঠী ও এলাকাবাসী দফায় দফায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে আসছেন।