খুলনা প্রতিনিধি
খুলনা রেলস্টেশনের ডিজিটাল স্ক্রিনে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের বার্তা প্রচারের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি গঠনের পর রেলওয়ের পশ্চিম জোনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের চার সদস্যের একটি দল খুলনা এসেছেন। আজ রোববার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে সাগরদাড়ি এক্সপ্রেসে এ কমিটির সদস্যরা খুলনায় পৌঁছায়।
খুলনায় পৌঁছে বিষয়টি তদন্ত করে স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন তাঁরা। এ ঘটনায় মামলা প্রস্তুতির প্রক্রিয়া রয়েছে বলে জানান খুলনা রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। এ ঘটনার পর থেকে রাজশাহী ও খুলনার রেলস্টেশনের ডিজিটাল স্ক্রিন বোর্ড বন্ধ রাখা হয়েছে।
রেলস্টেশনের ডিজিটাল স্ক্রিনে বার্তা প্রচারের ঘটনায় ৪ সদস্যের তদন্ত কমিটির প্রধান হলেন—পশ্চিম জোনের বিভাগীয় ট্রান্সপোর্ট অফিসার হাসিনা খাতুন। এ ছাড়া অন্য সদস্যরা হলেন—বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা গৌতম কুমার কণ্ডু, বিভাগীয় বৈদ্যুতিক প্রকৌশলী রিফাত শেখ ও বিভাগীয় সংকেত টেলিযোগাযোগ কর্মকর্তা সৌমিক কবীর শাওন।
কমিটি গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খুলনা রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার মাসুদ রানা। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, গতকাল শনিবার রাতে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। আজ রোববার দুপুরে তারা সাগরদাড়ি এক্সপ্রেস নামে একটি ট্রেনে খুলনায় পৌঁছান। তাঁরা তদন্ত করছেন। তদন্ত করার পর সাংবাদিকদের বিষয়টি জানানো হবে।
ঘটনার বিষয়টি জানতে চাইলে মাসুদ রানা বলেন, খুলনা রেলওয়ে স্টেশনে দুটি ডিজিটাল স্ক্রিন রয়েছে। স্ক্রিন বোর্ডটি নিয়ন্ত্রণ করেন ত্রিপলী সাইন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী আসলাম হোসেন সেন্টু। গত ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় একটি স্ক্রিন চলছিল এবং অপরটিতে হ্যাকড লেখা ছিল। তিনি সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি সেন্টুকে অবগত করেন। সেন্টু রাত ১০টার দিকে এসে বিষয়টি সমাধান করেন।
গতকাল শনিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে হঠাৎ করে ‘ছাত্রলীগ আবার ভয়ংকর রূপে ফিরে আসবে; জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু; শেখ হাসিনা আবার আসবে’ এমন একটি বার্তা ডিজিটাল স্ক্রিনে ভেসে উঠলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে সুইচ বন্ধ করে দেন।
এর আগে এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রেলস্টেশনের অবস্থান নেয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা-কর্মী, সাধারণ শিক্ষার্থী ও জনতা। এ সময় তাঁদেরকে নানা স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এদিকে প্রায় একই সময় নগরীর বয়রাস্থ আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসের স্ক্রিনেও একই ধরনের ভিডিও ভাইরাল হয়। এরপর তিনি ফোন দিলে ২০ মিনিট পর সেন্টু ঘটনাস্থলে আসেন। সেন্টু উপস্থিত জনতা ও সাংবাদিকদের কাছে বলেন, এর পাসওয়ার্ড ও ডিজিটাল স্ক্রিন তিনি নিয়ন্ত্রণ করেন। এ সময়ে সেন্টুকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, এ ঘটনায় রেলওয়ে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফেরদৌস আলম খান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মো. নাবিল খান বাদী হয়ে মামলা করবেন। তিনি মামলায় স্টেশনের তিনজন স্টাফের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও অনেকের বিরুদ্ধে মামলা করবেন। তারা সবাই স্টেশনের স্টাফ।’
এ ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র নেতারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আলোচনায় রয়েছেন। জেলা প্রশাসক অনুমতি দিলে মামলা রুজু হবে বলে তিনি আরও জানান।