গারো পাহাড়ের পাদদেশের গ্রাম কলসিন্দুর থেকে হিমালয় জয় করা ফুটবলারদের রাজকীয় প্রত্যাবর্তনে ময়মনসিংহে বর্ণিল আয়োজন করা হবে বলে জানা গেছে। সানজিদা-মারিয়াদের বরণ করতে তাদের নিজ জেলা ময়মনসিংহে টানা দুই দিন ব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। বিজয়ী ফুটবলারদের সংবর্ধনা দেওয়ার প্রস্তুতি রয়েছে তাদের নিজ গ্রাম কলসিন্দুরেও।
জানা গেছে, নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ট্রফি জয়ী বাংলাদেশ দলে থাকা কলসিন্দুরের আট ফুটবলারকে বরণ নিয়ে বিভাগীয় শহর ময়মনসিংহে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকালে ময়মনসিংহের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন মেয়েরা। পরে বিকেলে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, ক্রীড়া সংস্থা ও ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের যৌথ আয়োজনে নগরীর বৈশাখী মঞ্চ এবং রেঞ্জ ডিআইজির পক্ষ থেকে শুক্রবার পুলিশ লাইনসে তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। সংবর্ধনার আগে ছাদখোলা গাড়িতে পুরো শহর ঘুরবে সানজিদা আক্তার, মারিয়া মান্ডা, শাছুন্নাহার সিনিয়র, শামছুন্নাহার জুনিয়র, শিউলি আজিম, তহুরা খাতুন, সাজেদা আক্তার, মার্জিয়া আক্তার।
মালা রাণী সরকার আরও বলেন, ‘ময়মনসিংহ সদরের চুরখাই এলাকায় সিবিএমসিবি হাসপাতালের সামনে থেকে তাদের বরণ করে নিয়ে ছাদখোলা গাড়িতে শোভাযাত্রাসহ ময়মনসিংহ নগরীর প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করা হবে। এরপর তাদের সার্কিট হাউসে নিয়ে যাওয়া হবে। সেখানে দুপুরে খাবারের পর শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন উদ্যানের বৈশাখী মঞ্চে জেলা প্রশাসন, ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ও জেলা ক্রীড়া সংস্থার আয়োজনে তাদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। পরের দিন পুলিশের উদ্যোগে পুলিশ লাইনস মাঠে মেয়েদের বর্ণাঢ্য সংবর্ধনা দেওয়া হবে। সংবর্ধনা শেষে মেয়েদের নিয়ে কলসিন্দুরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করা হবে। সেখানে উপজেলা প্রশাসন তাদের সংবর্ধনা দিয়ে বরণ করবেন। সবশেষে মেয়েদের নিজ প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে জাঁকজমকপূর্ণ সংবর্ধনা দেওয়া হবে।’
ময়মনসিংহ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি একেএম দেলোয়ার হোসেন মুকুল বলেন, ‘মেয়েরা বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মাইক্রোবাসে ফেডারেশন থেকে ময়মনসিংহের উদ্দেশে রওনা দেবে। মেয়েদের গাড়ির আগে–পিছে পুলিশি টহল থাকবে। পথে পথে সংবর্ধনা শেষে সদরের চুরখাই এলাকায় সিবিএমসিবি হাসপাতালের সামনে তাদের আমরা বরণ করব। সেখানে দুটি খোলা পিকআপ ভ্যান থাকবে। একটিতে মেয়েরা এবং তাদের গড়ার কারিগররা থাকবে। অন্যটিতে ব্যান্ড পার্টি থাকবে। সেখান থেকে সোজা তাদের সার্কিট হাউসে নিয়ে আসা হবে। সেখানে কিছুক্ষণ বিশ্রামের পর তাদের বৈশাখী মঞ্চে সংবর্ধনা দেওয়া হবে।’
এ বিষয়ে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পুলক কান্তি চক্রবর্তী বলেন, ‘যাদের জন্য পুরো দেশের পাশাপাশি আমরা গর্বিত হয়েছি, তাদের সংবর্ধনাতে চমক থাকবে না সেটা হতে পারে না। আমরা চেষ্টা করছি আমাদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে মেয়েদের বরণ করতে। তাদের আসা থেকে শুরু করে থাকাকালীন সার্বিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আশা করছি সবকিছুতেই ব্যতিক্রম কিছু থাকবে।’
জেলা পুলিশ সুপার মো. মাছুম আহাম্মদ ভূঞা বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নে অগ্রগামীদের সংবর্ধিত করতে পারাটা আমাদের জন্য গর্বের। আমরা অধীর আগ্রহে তাদের জন্য অপেক্ষা করছি। নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে আমরা তাদের বরণ করব। ইতিমধ্যে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এই মেয়েদের জন্য আমরা গর্বিত হয়েছি। তাদের আমরা এমনভাবে বরণ করতে চাই, যাতে মেয়েরা বিশ্বজয় করে আমাদের করে গর্বিত করতে পারে।’
উল্লেখ্য, হিমালয় জয় করা কলসিন্দুরের আট নারী ফুটবলাররা হলেন—সানজিদা আক্তার, মারিয়া মান্ডা, শাছুন্নাহার সিনিয়র, শামছুন্নাহার জুনিয়র, শিউলি আজিম, তহুরা খাতুন, সাজেদা আক্তার, মার্জিয়া আক্তার। শুধু সাজেদা ছাড়া বাকিরা ইতিহাস খচিত ফাইনালে অংশ নিয়েছিল।