ত্রিশাল (ময়মনসিংহ): আলহেরা একাডেমি ত্রিশালের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক ও প্রধান শিক্ষক আজিজুল হক রশিদ ওরফে আব্দুর রশিদ পেশা বদল করে গরুর খামারের রক্ষণাবেক্ষক হিসেবে কাজ করছেন।
শিক্ষানগরী ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার পরিচিত নাম আব্দুর রশিদ। মহামারি করোনার কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে আজ তিনি গরুর খামারের রক্ষণাবেক্ষণকারী। অথচ এলাকার আলোহীনদের মধ্যে শিক্ষার আলো ছড়াতে নিজে চাকরির মায়া ছেড়ে গড়ে তোলেন আলহেরা একাডেমি, ত্রিশাল।
ত্রিশাল ইউনিয়নের মধ্য পাঁচপাড়া গ্রামের মৃত আজমত আলীর বড় ছেলে আব্দুর রশিদ। তিনি ১৯৯১ সালে বইলর-কানহর ডিএস দাখিল মাদ্রাসা থেকে দাখিল পাস করার পর ত্রিশাল নজরুল (ডিগ্রি) কলেজে ভর্তি হন। ১৯৯৩ সালে এইচএসসি পাস করেন। তারপর তিনি ডিগ্রিতে ভর্তি হয়ে গড়ে তোলেন মডার্ন কোচিং সেন্টার। পারিবারিক চাপ সামলাতে কোচিংয়ের পাশাপাশি চাকরির দরখাস্ত করতে থাকেন। বেশ কয়েকবার প্রাইমারি সহকারী শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার ভাইভা পর্যন্ত পৌঁছালেও চূড়ান্ত নিয়োগ পাননি।
আব্দুর রশিদ কোচিং পেশায় মনোনিবেশ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠার ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেন। এরই মধ্যে তাঁর কোচিংয়ের সুনাম ও ছাত্রসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় তিনি স্কুল প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত নেন। স্কুলের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন আলহেরা একাডেমি, ত্রিশাল। এরপর থেকে আলহেরা একাডেমি ত্রিশালের প্রধান শিক্ষক হিসেবে এক নামে পরিচিতি লাভ করেন আব্দুর রশিদ। পথচলায় দু–একবার ভাঙনের মুখে পড়ে আলাদা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠলেও ভেঙে পড়েননি আব্দুর রশিদ। আবার প্রাণপণ শ্রম দিয়ে নতুন রূপে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ভালোবাসায়, কিন্তু মহামারি করোনার কারণে এবার তিনি নিঃস্ব, অসহায়।
২০২০ সালের মার্চ থেকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। ঘরভাড়া ও শিক্ষকদের বেতন দিতে না পারায় ছেড়ে গেছেন অনেক শিক্ষক। তারাও জীবিকার প্রয়োজনে গার্মেন্টস বা অন্য কোনো পেশা বেছে নিয়েছেন। তাই পারিবারিক চাহিদা মেটানোর প্রয়োজনে ২ হাজার ৫০০ টাকা বেতনে কিছুদিন মুরগির দোকানে কাজ করেছেন। কিন্তু সামান্য বেতনে সংসার চালানো কষ্টকর। তাই আরেকটু ভালো থাকার আশায় ৭ হাজার টাকা বেতনে গরুর খামারের কর্মচারীর চাকরি নিয়েছেন তিনি।
শিক্ষক আব্দুর রশিদ জানান, বেসরকারি নন এমপিওভুক্ত শিক্ষকেরা সরকারি প্রণোদনা পেলেও উপেক্ষিত কিন্ডারগার্টেন বা কেজি স্কুলগুলো। তাই এসব স্কুল ও এর শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।