বাংলাদেশে মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত হ্যাচারিতে মাছের প্রজনন হয়ে থাকে। অন্য মাসে বায়ু ও পানির তাপমাত্রা কমে যাওয়ার কারণে মাছের পোনা উৎপাদন সম্ভব হয় না। ফলে শীতকাল এবং এর আগে ও পরে মাছের পোনা পাওয়া যায় না। এ ছাড়া এই সময়ে মাছের সব হ্যাচারি বন্ধ থাকে এবং পরবর্তী গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়।
প্রাকৃতিক এ সমস্যা সমাধান করে সারা বছর মাছের পোনা উৎপাদন ঠিক রাখতে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (বাকৃবি) একটি প্রকল্প চালু করেছে। কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে বাকৃবি ক্যাম্পাসে মৎস্যবিজ্ঞান বিভাগের অদূরে মাছের জন্য জলবায়ু গবেষণার গবেষণাগারের (এলসিআরএফ) উদ্বোধন করা হয়েছে। এর তত্ত্বাবধানে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মাৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক ও ফিশারিজ বায়োলজি ও জেনেটিকস বিভাগের অধ্যাপক ড. এ কে শাকুর আহম্মদ।
আজ শনিবার সকালে নবনির্মিত গবেষণাগার উদ্বোধন করেন বাকৃবির উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস ও মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আবুল মনসুরসহ আরও অনেকে।
এই প্রকল্পের উদ্যোক্তা মৎস্যবিজ্ঞান অনুষদের অ্যাকোয়াকালচার বিভাগের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাহফুজুল হক বলেন, ‘গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্রাতিরিক্ত তাপমাত্রা, অতি নিম্ন তাপমাত্রা, অনাবৃষ্টি, সূর্যের আলোর অপ্রতুলতাজনিত কারণে মাছের দৈহিক বৃদ্ধি ও প্রজনন সক্ষমতা কমে যায়। ফলে গুণগত মানের পোনা উৎপাদন ব্যাহত হয়। এই প্রকল্পের মাধ্যমে কীভাবে অভ্যন্তরীণ সিস্টেম নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পানির তাপমাত্রা ধরে রেখে মাছের দৈহিক বৃদ্ধি ও পোনা উৎপাদন সম্ভব তা যথাযথভাবে পরীক্ষা করা হচ্ছে। আশাবাদ করা হচ্ছে, এই প্রকল্পটি সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে পরিবর্তিত জলবায়ুতে মাছের বৃদ্ধি ও পোনা উৎপাদন সম্ভব হবে এবং বাংলাদেশে বছরের বেশি সময় ধরে টেকসই উপায়ে মাছ ও পোনা উৎপাদন সম্ভব হবে।’
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. লুৎফুল হাসান বলেন, এখানে একটি বহুমাত্রিক উন্নত গবেষণাগার স্থাপন করা হয়েছে; যা সনাতন হ্যাচারি পদ্ধতি ও নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি উভয় উপায়ে মাছের দৈহিক বৃদ্ধি ও পোনা উৎপাদনের গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে নেওয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই প্রকল্প দেশব্যাপী ছড়িয়ে দিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।