ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
মাইলেজ সুবিধা পুনর্বহাল না করায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছে বাংলাদেশ রেলওয়ের রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদ (লোকোমাস্টার, গার্ড, টিটিই)। এতে গতকাল সোমবার মধ্যরাত থেকে সারা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো ময়মনসিংহ অঞ্চলেও ২৮ জোড়া ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছে কয়েক হাজার যাত্রী।
প্রতিদিন গড়ে ময়মনসিংহ থেকে বিভিন্ন রুটে ট্রেনে যাতায়াত করে প্রায় ৬ হাজার মানুষ। বাংলাদেশ রেলওয়ে রানিং স্টাফ ঐক্য পরিষদের কর্মবিরতির কারণে ট্রেন চলাচল না করায় ভোগান্তির মধ্যে পড়েছে এই অঞ্চলের যাত্রীরা। আজ মঙ্গলবার সকালে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, টিকিট করেও গন্তব্যে যেতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করে যাত্রীরা। যথাসময়ে টিকিটের টাকা পেতেও বিড়ম্বনার শিকার হতে হচ্ছে তাদের।
ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী যাত্রী আশরাফ আলী বলেন, ‘৯ দিন আগে হাওর এক্সপ্রেস ট্রেনের চারটি টিকিট অনলাইনে করেছি। স্টেশনে এসে শুনি ট্রেন চলবে না। এখন টিকিটের টাকাও ফেরত পাচ্ছি না। কর্তৃপক্ষ বলছে, তিন দিনের মধ্যে টাকা পাব। এর কোনো মানে হয় না। দাবি আদায়ের আন্দোলনে আমরা কেন ভুগছি।’
সোহেল খান নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘ঢাকা যাব, তাই আগেই কাউন্টার থেকে টিকিট কেটেছি। এখন বলছে আন্দোলনের জন্য ট্রেন বন্ধ। টিকিটের টাকাও ১০টার পরে কাউন্টার থেকে ফেরত দেবে। যদিও জরুরি কাজ ছিল ঢাকায়, এখন তা আর হলো না।’
কর্মবিরতিতে থাকা রেলওয়ে রানিং স্টাফ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন ময়মনসিংহ কেওয়াটখালী শাখার অতিরিক্ত সম্পাদক মো. হানিফ বলেন, ‘দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কোনো ট্রেন চলবে না। সাধারণ মানুষের ভোগান্তির জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত। যদিও আমাদের এই আন্দোলন পূর্বঘোষিত। সরকার আমাদের দাবি মেনে নিলেই কর্মে ফিরব।’
সাধারণ যাত্রীদের ভোগান্তিতে দুঃখ প্রকাশ করে ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট নাজমুল হক খান বলেন, ‘আন্দোলন মানেই ভোগান্তি। স্টেশনে আসা যাত্রীদের দেখেই বোঝা যাচ্ছে। এই অঞ্চলে ২৮ জোড়া ট্রেনে প্রায় ৬ হাজার যাত্রী চলাচল করে। ট্রেন বন্ধ থাকায় সবাই ভোগান্তিতে পড়েছে। কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয় তাও বলতে পারছি না।’
নাজমুল হক আরও বলেন, ‘যারা আগে অনলাইনে টিকিট করেছে, তারা তিন দিনের মধ্যে টাকা ফেরত পাবে। আর কাউন্টার থেকে যারা টিকিট কেটেছে, তারা সকাল সাড়ে ৮টার পর থেকে টাকা ফেরত পাচ্ছে।’
ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকতার হোসেন বলেন, ‘সকাল থেকে স্টেশনে পুলিশের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। ট্রেন বন্ধের ক্ষোভে যাত্রী ও কর্তৃপক্ষের মধ্যে যেন কোনো ধরনের বাদানুবাদ না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। যাত্রীরা সহজে যেন টিকিটের টাকা ফেরত পায়, সেই সহযোগিতা করছি।’
এর আগে গত ২ ডিসেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত মাইলেজের দাবিতে সারা দেশের মতো ময়মনসিংহেও কর্মবিরতি হয়। তখন তিনটি রেলপথে ৮ জোড়া এবং ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ রেলপথে ভাওয়াল মেইল ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে।