ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
অন্তরা আক্তার (১৫), ছোটকাল থেকেই সাজগোজ করা তার শখ ছিল। তিন দিন আগে চাচাতো বোনকে নিয়ে হাতে লাগিয়েছে মেহেদি। আর গতকাল রোববার রাতে পরিবারের অগোচরে ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করে অন্তরা।
এরপর রাতেই ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উচাখিলা ইউনিয়নের আমোদপুর (১ম) গ্রাম থেকে তার ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। আজ দুপুরে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়। অন্তরা ওই এলাকার জসিম উদ্দিন ভূঁইয়ার মেয়ে।
পরিবার ও স্থানীয় লোকজন জানান, মা-বাবা ঢাকায় একটি বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে রাজধানীর তেজগাঁও মডেল হাইস্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল অন্তরা। তিন ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। ঢাকা থেকে বাড়ি আসার পর তার মা-বাবা প্রতিদিন মোবাইলে খোঁজখবর নিতেন। কিন্তু গতকাল রোববার সারা দিন অন্তরার নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও নম্বরটি বন্ধ দেখায়।
পরে বাড়ির লোকজনের নম্বরে কল দিয়ে অন্তরার খোঁজ নিতে বলেন তাঁরা। বাড়ির লোকজন ঘরের দরজা লাগানো দেখে ভাবে অন্তরা ঢাকায় চলে গেছে। অন্তরার বাবা ফের কল করলে বাড়ির লোকজনরা রাত ৯টার দিকে ঘরের ছিদ্র দিয়ে দেখতে পান ভেতর থেকে দরজা লাগিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে ঝুলছে অন্তরা। পরে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেন।
অন্তরার বাবা জসিম উদ্দিন ভূঁইয়া ও বোন ঝিনুক আক্তার (২০) বলেন, ‘অন্তরা এক বছর ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছিল। বেশ কয়েকবার ডাক্তার দেখানো হয়েছিল। কিন্তু অবস্থার উন্নতি হয়নি।’
এদিকে মেয়েকে হারিয়ে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন মা নাসিমা খাতুন। বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ‘ছুডুবেলা থেকেই আমার মাইয়াডা সাজগোজ করতে পছন্দ করত। আমার কত কষ্টের অন্তরা গো, অন্তরারে কিবায় (কীভাবে) বিদায় দিল গো। মা (অন্তরা) তোমার দমডা (নিশ্বাস) কেমনে জানি গেছে গো, কত কষ্ট অইছে তোমার দমডা যাইতে গো।’
পুলিশ জানায়, ঘরের আড়ায় সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ঝুলছিল অন্তরা। তার বিছানার বালিশের নিচ থেকে একটি স্মার্টফোন উদ্ধার করা হয়েছে। তবে অন্তরা ঠিক কী কারণে এমনটি করেছে তা বলতে পারছে না কেউ। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে বিষয়টি পরিষ্কার হবে।
এ ব্যাপারে ঈশ্বরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘খবর পেয়ে রাতেই ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে সুরতহাল করা হয়। ময়নাতদন্তের লাশ ময়মনসিংহ মেডিকেল হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’