ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে নবীনদের গেস্টরুম করানোর অভিযোগে ২৭ শিক্ষার্থীকে ১ বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল রোববার রাতে জড়িতদের চিহ্নিত করে শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে সম্পৃক্ত থাকায় হল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ওই হলের লেভেল-১, সেমিস্টার-২, লেভেল-২, সেমিস্টার-২ এবং মাস্টার্সের একজন শিক্ষার্থী রয়েছেন।
জানা যায়, গত শনিবার রাত ৯টার দিকে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের হলের রিডিং রুমে ডাকা হয়। সেখানে তাঁদের অবশ্যই মানতে হবে উল্লেখ করে কিছু উদ্ভট নিয়ম তুলে ধরেন দ্বিতীয় বর্ষের প্রায় ২০ জন শিক্ষার্থী। নিয়মগুলো হলো: হলে সাইকেল চালানো যাবে না, দ্বিতীয় তলায় যাওয়া যাবে না, বড় ভাইদের সঙ্গে দিনে যতবার দেখা হবে ততবার সালাম, পরিচয় ও হ্যান্ডশেক করতে হবে, হলে লুঙ্গি পরা যাবে না, হলের গ্রন্থাগারে ল্যাপটপ নিয়ে যাওয়া যাবে না, হলের ক্যানটিনে যাওয়া যাবে না।
পরে তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা এসে নবীনদের কাছে তাঁদের দাবিদাওয়া জানতে চান। নবীনেরা তাঁদের হলভিত্তিক সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা চলে গেলে তাঁদের কাছে সমস্যা তুলে ধরার কারণে নবীন শিক্ষার্থীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা। এরপরে ছোটখাটো ভুল, যেমন হাত বাঁকা রেখে দাঁড়ানো, হাত সামনে রেখে দাঁড়ানো, মাথা উঁচু বা নিচু করে রাখা ইত্যাদি কারণ দেখিয়ে নবীন শিক্ষার্থীদের গালিগালাজ করেন তাঁরা। এরপর ১০ রকমের হাসি, ১০ রকমের সালাম, গাছে ঝুলে থাকার অভিনয় করা, নাচ করাসহ বিভিন্ন উদ্ভট শাস্তি দেওয়া হয়। এমন পরিস্থিতিতে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে এক নবীন শিক্ষার্থী জ্ঞান হারিয়ে ফেললে তাঁকে হলের মধ্যেই প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়। প্রায় রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলে এই ‘গেস্টরুম’ নির্যাতন। পরে নবীন শিক্ষার্থীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের হল থেকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
এ বিষয়ে আজ সোমবার সকালে বাকৃবির সহযোগী ছাত্রবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সাইফুল্লাহ বলেন, সোহরাওয়ার্দী হলের ঘটনায় ৫২ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ২৭ জন সোহরাওয়ার্দী হলের ছাত্র। বাকিরা অন্য হলের সঙ্গে যুক্ত হলেও থাকেন সোহরাওয়ার্দী হলে। সোহরাওয়ার্দী হলের ২৭ জনকে ১ বছরের জন্য হল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অধিকতর শাস্তির জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিসিপ্লিনারি কমিটিতে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।
অধ্যাপক সাইফুল্লাহ আরও বলেন, যাঁরা এই হলের ছাত্র নন, কিন্তু অবৈধভাবে থাকছেন এবং এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হবে।