সরকারের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তারা সাধারণত নিজ জেলায় পদায়ন পান না। তবে বিভিন্ন মাধ্যমে লবিং করে নিজ জেলায় পদায়ন নিয়ে দাপটের সঙ্গে চাকরি করছেন ময়মনসিংহের তারাকান্দা উপজেলার প্রকৌশলী মোহাম্মদ জোবায়ের হোসেন। যোগদানের পর থেকে স্বজনপ্রীতি, ঘুষ-বাণিজ্যসহ ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয় ও কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী জোবায়েরের বাড়ি ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা উপজেলার সোনারগাঁও গ্রামে। ২০২২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর তারাকান্দা উপজেলায় সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন। এই উপজেলায় উপজেলা প্রকৌশলীর পদ শূন্য থাকায় তিনি এই পদে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। যোগদানের পর থেকে কাজের চুক্তি ও বিল ছাড়ের সময় কমিশন নেওয়া, বিভিন্ন অজুহাতে ঠিকাদারদের হয়রানি করাসহ নানা অনিয়ম করে আসছেন। এ ছাড়া ঠিকাদারদের সড়ক নির্মাণ, মেরামত, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ ও মেরামতের কাজের বিলের ফাইল আটকে রেখে ঘুষ আদায় করেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ঠিকাদার বলেন, টাকার বিনিময়ে তিনি (জোবায়ের) ঠিকাদারদের রেট কোড দেন। কাজ পেলে চুক্তির সময় প্রাক্কলিত মূল্যের ২ শতাংশ তাঁকে দিতে হয়। এ ছাড়া নিয়ম মেনে কাজ শতভাগ সঠিকভাবে করা হলেও বিভিন্ন ত্রুটিবিচ্যুতি খুঁজে বের করে নানা অজুহাতে ঠিকাদারদের হয়রানি করেন। তাঁকে টাকা দিলে খারাপ মানের উপকরণ দিয়েও কাজ করা যায়। ঘুষের টাকা লেনদেনের প্রমাণও তাঁদের কাছে রয়েছে বলে দাবি ওই ঠিকাদারদের।
অভিযোগ রয়েছে, জোবায়ের তাঁর এক বন্ধুর ভাইয়ের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নিয়ে নিজেই ঠিকাদার সেজে বেশ কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবনের নির্মাণকাজ করছেন। এ ছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে উপজেলা পরিষদের এডিবি, এডিবি স্পেশাল ও রাজস্ব তহবিলের প্রায় ২ কোটি টাকার ভুয়া প্রকল্প দেখিয়ে তা আত্মসাৎ করেছেন। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে জোবায়ের হোসেন বলেন, ‘মানুষ অভিযোগ করতেই পারে। তদন্ত করে দেখেন। নিজ জেলায় পোস্টিং নিয়ে কোনো কথা বলতে পারব না। আমার পোস্টিং অর্ডার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অবশ্যই আইন-কানুন দেখেই করেছেন।’
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর ময়মনসিংহ জেলার নির্বাহী প্রকৌশলী এনায়েত কবীর বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’
এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী (প্রশাসন) আবু হানিফ মৃধা বলেন, ‘অন্যান্য সব দপ্তরের মতো এলজিইডিতেও নিজ জেলায় সহকারী প্রকৌশলীদের চাকরির সুযোগ নেই। তারাকান্দা উপজেলার বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’