ময়মনসিংহ নগরের থানাঘাটে ২০০ বছরের পুরোনো হজরত শাহ সুফি সৈয়দ কালু শাহ (রহ.)-এর মাজার ভাঙচুরের প্রতিবাদে অব্যাহত আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসেবে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় হামলার ক্ষতিপূরণ দাবি করা হয়। আজ বুধবার দুপুরে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ সুফিবাদ ঐক্য পরিষদ।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৮ জানুয়ারি একদল হুজুর হামলা চালিয়ে মাজার ভাঙচুর করলেও প্রশাসন অজ্ঞাত ১ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করিয়ে মামলা নিয়েছে। এতে উগ্রবাদী গোষ্ঠীকে বাঁচানো হচ্ছে। ঐতিহ্যবাহী মাজারটিতে হামলা, ভাঙচুর চালানোয় ৪৭ লাখ ৩ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। মাজার সংস্কারে ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ সারা দেশের মাজারগুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বাংলাদেশ সুফিবাদ ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক কাজল দেওয়ান ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, দেশের কোথাও যেন এমন ঘটনা না ঘটে সেই লক্ষ্যে নজরদারি বাড়ানোসহ মাজার ভাঙচুরের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। ১৭৯তম বার্ষিক ওরস শরিফে যারা হামলা চালিয়ে তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। এর প্রতিবাদ করতে গিয়েও আমরা পদে পদে বাধাগ্রস্ত হচ্ছি। এতে উগ্রবাদকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। শত শত বছর ধরে মাজার, মসজিদ ও মন্দির পাশাপাশি থেকে কার্যক্রম পরিচালনা করলেও হামলার ঘটনা পীড়াদায়ক। যারা সম্প্রীতি নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে, তাঁদের পুলিশ বাঁচানোর জন্য মাজার ভাঙচুরে লোক দেখানো ১ হাজার ৫০০ জনকে আসামি করিয়ে লোক দেখানো মামলা নিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে একাত্মতা পোষণ করে সমন্বয়ক গোকুল সূত্রধর মানিক বলেন, ‘জীবন রক্ত ঝরিয়ে আমরা নতুন দেশ পেয়েছি। সেই দেশে ভিন্ন মতাদর্শের মানুষ স্বাধীনভাবে চলাচল করবে সেটাই স্বাভাবিক। সেখানে কারও মতের বিরুদ্ধে গিয়ে হামলা ভাঙচুর চালানো মোটেই কাম্য নয়। আমরা ঘটনার সঠিক তদন্ত সাপেক্ষে বিচার দাবি করছি।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ বাউল সমিতির সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম আসলাম, মাজার হামলা ভাঙচুর তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম তরিকত, খলিলুর রহমান চিশতী নিজামী, আকসান হাবীব সিদ্দিকী, মাসুদ ভূঞা চিশতী নিজামী প্রমুখ।
গত ৮ জানুয়ারি ১৭৯তম বার্ষিক ওরস উপলক্ষে নগরের থানাঘাট ব্রহ্মপুত্র নদের পারে কাওয়ালি গানের আয়োজন করেন ভক্তরা। রাত ১১টার দিকে গানের অনুষ্ঠান শুরুর পর সাড়ে ১১টার দিকে সেখানে হামলা করেন মাদ্রাসার ছাত্ররা। দ্রুত শিল্পীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। মঞ্চ, চেয়ার, শামিয়ানা গুঁড়িয়ে চলে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে রাত ৩টার দিকে ২০০ বছরের পুরোনো মাজারে হামলা হয়। মাজারের পাকা স্থাপনার কিছু অংশ ও ভেতরে থাকা জিনিসপত্র ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনায় ৯ জানুয়ারি রাতে কোতোয়ালি মডেল থানায় মাজারটির অর্থ সম্পাদক মো. খলিলুর রহমান বাদী হয়ে ১ হাজার ৫০০ জন অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করেন।
মাজারে হামলা, ভাঙচুর, লুট, দান বাক্স ডাকাতি ও কোরআন শরিফ পোড়ানোর ঘটনায় গতকাল মঙ্গলবার সকালে মানববন্ধনের আয়োজন করলে প্রশাসন সকাল পৌনে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা জারি করে।
পরে গতকাল দুপুরে পাটগুদাম চায়নামোড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে সমাজ রূপান্তর সাংস্কৃতিক সংঘ। এ ছাড়া ওই দিন বিকেলে নগরের ফিরোজ-জাহাঙ্গীর চত্বরে মাজার ভাঙচুরের প্রতিবাদ জানিয়ে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনতে কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।