ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চলমান ডিউটি রেখে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখা সেই উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সোহেল রানাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আজ বুধবার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লোপা চৌধুরী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, গত শনিবার ঈশ্বরগঞ্জ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডিউটি ফাঁকি দিয়ে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখার অভিযোগ উঠে ওই মেডিকেল অফিসার সোহেল রানার বিরুদ্ধে। সরেজমিন এর সত্যতা মিললে বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে নিউজ প্রকাশিত হয়। তার-ই পরিপ্রেক্ষিতে সেই মেডিকেল অফিসারকে তিন দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, গত শনিবার বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সোহেল রানার ডিউটি ছিল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে। কিন্তু তিনি ২টায় হাসপাতালের ডিউটি রেজিস্ট্রারে স্বাক্ষর করেই ডিউটি ফাঁকি দিয়ে চলে যান পৌর সদরের ব্রিজসংলগ্ন ফয়সাল মেডিসিন কর্নারের নিজস্ব চেম্বারে। ওই সময় বেলা আড়াইটার দিকে সরেজমিন গিয়ে তাঁকে ওই চেম্বারে জিসান (৪ মাস) নামে এক শিশু রোগীর প্রেসক্রিপশন করতে দেখা যায়।
প্রেসক্রিপশনটি হাতে নিয়ে দেখা যায়, তাঁর নামের আগে ডা. মো. সোহেল রানা লেখা। শুধু তা-ই নয়, মেডিসিন, চর্ম, যৌন, মা ও শিশু এবং মানসিক রোগের বিশেষ অভিজ্ঞ বলেও উল্লেখ রয়েছে ওই প্যাডে। মেডিকেল অফিসার সোহেল রানা দীর্ঘদিন ধরেই নিয়মিত ফয়সাল মেডিসিন কর্নারে রোগী দেখে আসছেন বলে জানান চেম্বারের আশপাশের ব্যবসায়ীরা।
হাসপাতালের জরুরি বিভাগের ডিউটি রেখে প্রাইভেট চেম্বারে রোগী দেখার বিষয়ে জানতে চাইলে মেডিকেল অফিসার সোহেল রানা জানান, তাঁর ডিউটি বেলা ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। তিনি দুধ কিনতে বাজারে এসেছিলেন এমন সময় একজন গরিব রোগী তাঁকে অনুরোধ করলে তিনি চেম্বারে বসে তাঁর প্রেসক্রিপশন করে দেন।
তবে শিশু জিসানের মা রোজিনা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমি কেন তাঁকে (সোহেল রানাকে) আমার বাচ্চা দেখার জন্য অনুরোধ করব। বরং আমি এসে তাঁকে চেম্বারেই পেয়েছি। পরে ২০০ টাকা দিয়ে আমার বাচ্চাকে দেখিয়ে প্রেসক্রিপশন করিয়েছি।’
এদিকে শনিবার বিকেল ফের হাসপাতালে জরুরি বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, বিকেল ৫টা পর্যন্ত মেডিকেল অফিসার সোহেল রানা ডিউটিতে ছিলেন না। এ সময় জরুরি বিভাগে উপস্থিত চিকিৎসক সাকিবের কাছে সোহেল রানার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন সোহেল খেতে গেছেন। ওই সময় হাসপাতালে সাংবাদিক গেছে শুনে দ্রুত হাসপাতালে উপস্থিত হন সোহেল রানা। তখন তিনি সাংবাদিকদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে সংবাদ প্রকাশ না করার জন্য অনুরোধ করেন।
মেডিকেল অফিসার সোহেল রানাকে শোকজের বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. লোপা চৌধুরী বলেন, ‘হাসপাতালে চলমান ডিউটি রেখে ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী দেখার অভিযোগ উঠে উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সোহেল রানার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশও হয়েছে। যে কারণে তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আগামী তিন কার্য দিবসের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। পরে তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’