ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
এক যুগ আগেও মাটির তৈরি তৈজসপত্রের ব্যাপক চাহিদা ছিল। কিন্তু আধুনিকতার ছোঁয়ায় মানুষজন এখন প্লাস্টিক ও সিরামিকের তৈজসপত্র ব্যবহার করছে। ফলে মাটির তৈরি তৈজসপত্রের কদর দিনদিন কমে যাচ্ছে। ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের অলকা রানি পাল আক্ষেপ নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন।
ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জে শত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও পূর্বপুরুষের এই পেশা ছাড়েননি উপজেলার আঠারবাড়ি ইউনিয়নের খালবলা গ্রামের একটি পরিবার। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, মাটির সঙ্গে পানি মেশানোর কাজে ব্যস্ত কয়েকজন নারী। মাটিতে পানি মেশানো হয়ে গেলে চাকের ওপর বসিয়ে ওই কাঁদা মাটি দিয়ে বিভিন্ন রকমের জিনিসপত্র তৈরি করছেন বাড়ির গৃহিণীরা। মাটির তৈরি জিনিসগুলো রোদে শুকানোর পর আগুনে পোড়ানোর জন্য প্রস্তুত করছেন বাড়ির পুরুষেরা। এরপর রং করে আবার রোদে শুকিয়ে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে অলকা রানি পাল বলেন, ‘আমরা বৈশাখ মাস ছাড়া ১১ মাস মাটির তৈরি জিনিসপত্র তৈরি করি।’
কুমার স্বপন চন্দ্র পাল বলেন, ‘পুরো উপজেলার মধ্যে একমাত্র আমরাই এই কাজ করি। যে কারণে আমাদের বাড়িটি কুমার বাড়ি হিসেবে এলাকায় বেশ পরিচিত। সাত-আট বছর আগে আরও অনেকেই এই পেশায় সম্পৃক্ত ছিল, কালের বিবর্তনে সবাই তা ছেড়ে দিলেও পূর্বপুরুষের পেশা হিসেবে আমরা তা ছাড়তে পারিনি। তবে আমাদের প্রজন্মেই হয়তো এই শিল্পের সমাপ্তি হবে। কেননা আমাদের ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করে চাকরির চিন্তা করবে। তারা এই পেশায় সম্পৃক্ত নাও হতে পারে।’
পৌর এলাকার বাসিন্দা শ্রী রাজব দাস বলেন, ‘কয়েক বছর আগেও দেখতাম লোকজন কাঁধে করে মাটির তৈরি তৈজসপত্র নিয়ে আসত। এখন আর সচরাচর তা চোখে পড়েনা। একটা সময় পর, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের হয়তো মাটির তৈরি জিনিসপত্র সম্বন্ধে ধারণাই থাকবে না।’
আঠারোবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জুবের আলম রূপক বলেন, ‘পুরো উপজেলায় একমাত্র আমাদের ইউনিয়নেই এই শিল্পের কাজ হয়। এটা আমাদের জন্য গর্বের বিষয়। তাদের এই পেশাটি ধরে রাখতে সর্বদা তাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করব।’
এ বিষয়ে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোসা. হাফিজা জেসমিন বলেন, ‘মাটির তৈরি তৈজসপত্রের সঙ্গে বাঙালির ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। এই শিল্পটা বাঁচিয়ে রাখতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।’