Ajker Patrika
হোম > সারা দেশ > ময়মনসিংহ

রাজকীয় স্বাদ রাজার চায়ে

মো. সাইফুল আলম তুহিন, ত্রিশাল (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি

রাজকীয় স্বাদ রাজার চায়ে

চা বিক্রেতা রাজার দোকানের সাজসজ্জা দেখেই যে কারও মনে হতে পারে কোনো রাজা-বাদশার প্রাসাদে চা পান করতে গিয়েছেন। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত মেলায় এমনই এক চায়ের দোকান সাজিয়ে বসেছেন রাজা মিয়া। সামনেই সারিবদ্ধভাবে সাজিয়ে রেখেছেন পিতলের তৈরি বিভিন্ন ডিজাইন ও আকারের কেটলি। 

চারদিকে লোকজনের ভিড়, অগ্রিম টাকা পরিশোধ করে টোকেন হাতে অপেক্ষা করছেন চা পেতে। মেলা চলাকালে এমন দৃশ্যের দেখা এখানে সব সময়ই মিলছে। চা পান করতে আসছেন প্রশাসন থেকে শুরু করে রাজনৈতিক শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরাও। একবার চা পান করেই ভক্ত হয়ে উঠছেন রাজা মিয়ার চায়ের। 

আজহার উদ্দিন ওরফে রাজা মিয়া ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার নওধার গ্রামের আলিম উদ্দিনের ছেলে। আজহার উদ্দিন লোক মুখে প্রচার পেয়ে হয়ে উঠেছেন রাজা মামা। ব্যতিক্রমী গোঁফ, চা বিক্রির অভিনব সব ধরনের জন্যই ভালোবেসে মানুষ তাঁকে রাজা মামা বলে ডাকতে শুরু করে। 

রাজা মিয়া জানালেন, নিজ এলাকায় জাতীয় কবির স্মৃতিধন্য নজরুল জন্মবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে এটাই তাঁর প্রথম চায়ের দোকান নিয়ে বসা। তবে ঢাকা বিমানবন্দর ও গাজীপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁর এমন আরও ১৮টি চায়ের দোকান রয়েছে। তাঁর মাসিক আয় ১ থেকে দেড় লাখ টাকা। তিনি আরও জানালেন, তাঁর দোকানে চা পান করতে বিভিন্ন মন্ত্রী, এমপি ও বিভিন্ন প্রশাসনিক কর্মকর্তারাও আসেন এবং চা পান করে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। 

তবে চা বিক্রেতা আজহার উদ্দিনের আজকের রাজা হয়ে ওঠার পেছনে রয়েছে দুঃখ-কষ্টের জীবনকাহিনি। ত্রিশালের খেটে খাওয়া রাজাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি কোনো প্রতিবন্ধকতাই। রাজা মিয়া জানান, তাঁর ১৮টি স্টলে এখন ৬৫ জন কর্মচারী কাজ করেন। তাদের প্রত্যেককে ১২ থেকে ২২ হাজার টাকা বেতন দিচ্ছেন তিনি। যে কি-না একদিন নিজেই কাজ খুঁজে ফিরেছেন, সেই রাজাই এখন চাকরি দিচ্ছেন বেকার যুবক-যুবতীদের। 

রাজার প্রতিবেশী মামুন জানান, রাজার জীবনযুদ্ধ বেদনার পাশাপাশি যথেষ্ট অনুপ্রেরণার। রাজা একসময় বাসা-বাড়িতে কাজ করা থেকে শুরু করে ফেরি করে পান, সিগারেট, চকলেটও বিক্রি করেছেন। পাশাপাশি কিছুটা পড়াশোনাও করেছেন। এ অল্প আয় থেকেই তাঁর বাবা আলিম উদ্দিনকে অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করেছেন। অন্যের বাড়িতে গরু দেখাশোনার পাশাপাশি চাষাবাদের কাজও করেছেন। একপর্যায়ে পরিচিত একজনের পরামর্শে ঢাকায় গিয়ে বড়ই বিক্রি শুরু করেন রাজা। তখন তাঁকে বিমানবন্দর এলাকার পাবলিক টয়লেটের ছাদেও রাত কাটাতে হয়েছে। 

মামুন আরও জানান, রাজা বিদেশ গিয়ে বিভিন্ন দেশের শেফদের দেখে চা বানানোর কৌশল রপ্ত করে। একদিন রাজা হোটেল থেকে পালিয়ে বের হলে আবুধাবির পুলিশ তাঁকে ধরে দেশে পাঠিয়ে দেয়। দেশে ফিরে তিনি ঢাকার বিমানবন্দর এলাকায় চায়ের দোকান দেন। তারপর থেকেই তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। আমরা ত্রিশালবাসী তাঁকে নিয়ে গর্ব করি। 

নজরুল মেলায় রাজা মিয়ার চা পান করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে খলিলুর রহমান নামে একজন বলেন, ‘এ রকম মজার চা আমি আগে কখনো পান করিনি। সত্যি অসাধারণ চা বানান তিনি। আর ওনার চা বানিয়ে পরিবেশনের স্টাইলটা তো আরও অসাধারণ।’

জানা যায়, প্রথমে রাজা পাঁচ টাকায় চা বিক্রি করতেন। শুরুতে মাল্টা চা, কালিজিরা চা, তেঁতুল চা আর সাধারণ দুধ চা বিক্রি করতেন। পাশাপাশি আবুধাবিতে শেখা রেসিপি দিয়ে কিছু স্পেশাল চা বানাতে শুরু করেন। সেসব চা ক্রেতারা সানন্দে গ্রহণ করে, বিশেষ করে তাঁর কাজুবাদামের চা এবং ইন্ডিয়ান মাসালা চা জনপ্রিয় হয়। কাজুবাদামের চায়ের মধ্যে কাজুবাদাম, কাঠবাদাম, হরলিকস, ম্যাটকফি, ব্ল্যাক কফি, কিশমিশ, চিনি, গুঁড়া দুধ, কনডেনসড মিল্ক দেন। একইভাবে ইন্ডিয়ান মাসালা চা-ও বানান অনেক উপাদান দিয়ে। ইন্ডিয়ান মাসালা চা-তে তেজপাতা, এলাচি, লবঙ্গ, হরলিকস, গুঁড়া দুধ, কনডেনসড মিল্ক ও ম্যাটকফি ছড়িয়ে দেন। 

রাজা প্রতি কাপ চায়ের দাম নিচ্ছেন ২০ থেকে ৫০ টাকা। ইরানি, জাফরানি, ইন্ডিয়ানসহ দেশ–বিদেশের ১৫২ প্রকারের চা বানিয়ে বিক্রি করেন তিনি।

মাছি দমনে ‘ফ্রুট ফ্লাই ট্র্যাপ’

মোবাইল নম্বর হ্যাক, ইউএনও পরিচয় দিয়ে ১৫০০ টাকা দাবি

হাট ইজারায় কোটি টাকায় সমঝোতা

জনস্বাস্থ্যের প্রকল্পে দুর্নীতি: জামানতের ৫ গুণ বেশি আদায়

নালিতাবাড়ীতে পৃথক অভিযানে গ্রেপ্তার ১১

পাহারাদারকে হত্যা করে গরুর খামারে লুট

টেলিফোন সংযোগ নেই, বিল এল ১৭ হাজার

বন্ধ সংযোগে ১০ বছর পর বিল ৩৬ হাজার

ভ্রাম্যমাণ আদালতের গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ১২ ইটভাটামালিকের বিরুদ্ধে মামলা

ময়মনসিংহে বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীকে ধর্ষণের অভিযোগ, আটক ১