রাজশাহীর সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত ৪০ তম ক্যাডেট উপপরিদর্শক (এসআই) ব্যাচের যে আটজনের কাছে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছিল, তাদের অব্যাহতি দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
আজ বুধবার রাতের ক্লাসে তাঁদের হাতে অব্যাহতিপত্র ধরিয়ে দেওয়া হয়।
এর আগে গত ২৯ ডিসেম্বর তাদের কাছে কৈফিয়ত তলব করা হয়েছিল। তাদের বিরুদ্ধে প্রশিক্ষণ মাঠে উচ্চস্বরে হই চই করা এবং দৌড়ানোর বদলে হাঁটার অভিযোগ আনা হয়। এ অভিযোগের জবাব দিতে তাঁদের তিন দিন সময় দেওয়া হয়। এরপরই তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হলো।
এ বিষয়ে পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ মাসুদুর রহমান ভুঞার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। ফোন ধরেননি পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) ইনামুল হক সাগরও। তবে ওই ব্যাচে প্রশিক্ষণরত সূত্র আটজনকে অব্যাহতির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সূত্র জানায়, রাতের ক্লাস চলাকালে আটজনকে অব্যাহতির চিঠি দেওয়া হয়। এরপরই তাঁরা ক্লাস থেকে কাঁদতে কাঁদতে বেরিয়ে যান। ওই আটজনকে রাতের মধ্যেই একাডেমি থেকে বের হতে বলা হয়েছে।
ওই সূত্র আরও জানায়, আগামী ৯ জানুয়ারি তাঁদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজের মাধ্যমে পাসিং আউট হবে বলে তাঁদের জানানো হয়েছে। যদিও ওই দিন শেষ পর্যন্ত পাসিং আউট হবে কি না তা নিয়ে তাঁরা শঙ্কায় আছেন।
গত বছরের ৫ নভেম্বর ৪০ তম এসআই ক্যাডেট ব্যাচের এক বছর মেয়াদি প্রশিক্ষণ শুরু হয়। মোট প্রশিক্ষণার্থী ছিলেন ৮২৩ জন। গত ৪ নভেম্বর তাঁদের প্রশিক্ষণ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এখনো প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজের আয়োজন করা হয়নি। গত ২৬ নভেম্বর এসআইদের সমাপনী কুচকাওয়াজের জন্য দিন ঠিক করা হলেও পরে স্থগিত করে দেওয়া হয়।
সম্প্রতি তিন দফায় মোট ৩১৩ জন প্রশিক্ষণার্থী এসআইয়ের কাছে ব্যাখ্যা তলবের পর তাঁদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। এর মধ্যে গত ২১ অক্টোবর ২৫২ জন, ৪ নভেম্বর ৫৮ জন ও ১৮ নভেম্বর ৩ জন ক্যাডেট এসআইকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সবশেষ বুধবার আটজন অব্যাহতি পেলেন। সব মিলিয়ে এই ব্যাচের ৮২৩ জনের মধ্যে ৩২১ জন ক্যাডেটকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
এদের বিরুদ্ধে নাশতা না খেয়ে মাঠে হইচই করা এবং প্রশিক্ষণ চলাকালে অমনোযোগী থাকার অভিযোগ আনা হয়। কৈফিয়ত তলবের পর ‘সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারার’ কারণ দেখিয়ে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। তবে অব্যাহতিপ্রাপ্তদের দাবি, মাঠে এসবের কিছুই ঘটেনি।
এদিকে সারদায় গত বছরের ২১ অক্টোবর ৪০ তম বিসিএসে সুপারিশপ্রাপ্ত পুলিশ ক্যাডারের ৭১ জন কর্মকর্তার এক বছর মেয়াদি মৌলিক প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। গত ২০ অক্টোবর এদের সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হওয়ার তারিখ নির্ধারণ ছিল। কিন্তু আগের রাতে হঠাৎ সমাপনী কুচকাওয়াজ স্থগিত করে দেওয়া হয়। এরপর ২৪ নভেম্বর আবারও সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানের দিন ঠিক করা হয়। তবে ১৮ নভেম্বর আবারও কুচকাওয়াজ স্থগিত করা হয়।
পরে গত ১৫ ডিসেম্বর ২৫ জন প্রশিক্ষণরত এএসপিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। গত ২৬ নভেম্বর বিকেলে প্রশিক্ষণ চলাকালে তারা মাঠে দৌড় না দিয়ে এলোমেলোভাবে হেঁটেছেন বলে অভিযোগ আনা হয়েছে। এই এএসপিরা যে কোনো সময় অব্যাহতির চিঠি পাওয়ার আতঙ্কে রয়েছেন। এদের পাসিং আউটের আগের রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক সমন্বয়ক অভিযোগ তোলেন, ছাত্রলীগের ক্যাডাররা প্রশিক্ষণ শেষ করে পুলিশে যোগ দিচ্ছেন। তারপরই তাদের পাসিং আউট স্থগিত হয়ে যায়।