গাছ ভরা সোনালি মুকুলের ম-ম ঘ্রাণ এখন নওগাঁর বাতাসে। তবে দীর্ঘ শীতের প্রভাবে দেরিতে মুকুল আসা এবং বাড়তি খরচে দুশ্চিন্তার ছাপ পড়েছে চাষিদের। বিশেষ করে বালাইনাশক ব্যবস্থাপনায় অস্বস্তি তৈরি হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৪৫ শতাংশ গাছে মুকুলের দেখা মিলেছে। এবার পরিচর্যা ব্যয় বাড়ায় বিনিয়োগে হিমশিম খাচ্ছেন চাষিরা। মুকুলে হেরফের হওয়ার প্রভাব পড়বে উৎপাদনেও।
এদিকে কৃষি বিভাগের দাবি, প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে মুকুল আসতে এক সপ্তাহ দেরি হলেও এটি নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। উৎপাদন ধরে রাখতে চাষিদের নানামুখী পরামর্শ দিচ্ছে কৃষি বিভাগ।
চাষিরা জানান, এবার দেরিতে শীতের আগমন, দীর্ঘমেয়াদি শৈত্যপ্রবাহ, অতিরিক্ত শীত ও ঠান্ডা হওয়ায় আমের গাছে মুকুল এসেছে দেরিতে। এ কারণে পরিচর্যা ব্যয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তাঁরা।
সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন আমবাগান ঘুরে দেখা গেছে, মার্চের প্রথম সপ্তাহেও কিছু কিছু বাগানের আমগাছে কোনো মুকুল নেই। দু-একটি গাছে থাকলেও একেবারেই কম। চাষি ও আম ব্যবসায়ীরা বাগানে স্প্রে ও সেচ দেওয়া নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষি অফিস ও কীটনাশক ব্যবসায়ীদের পরামর্শে পরিচর্যা করছেন। তবে সবাই দুশ্চিন্তায় আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নিরাপদ আম উৎপাদনে সফল নওগাঁর চাষিরা। কয়েক বছর ধরে বিদেশে পাকা আম রপ্তানি করছেন। জেলায় আম্রপালি, বারি-৪, কাটিমন, গৌড়মতি ও নাগ ফজলি জাতের আম বেশি উৎপাদন হয়। এসব বাগানে এবার কোনো গাছে আগে আবার কোনো গাছে মুকুল পরে আসছে। এ কারণে অনেক চাষি ও ব্যবসায়ী হতাশ হয়ে পড়েছেন।
সাপাহারের নিশ্চিতপুর এলাকার চাষি রেজাউল ইসলাম জানান, এ বছর দীর্ঘমেয়াদি শীত ও ঠান্ডা হওয়ায় আমবাগানের সব গাছে এখনো মুকুল আসেনি। তাই তিনি খুব চিন্তিত। এ ছাড়া এ বছর বালাইনাশকের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ অনেক বেশি হয়েছে। তবু গাছে মুকুল আসার আশায় সেচ ও বালাইনাশক স্প্রে করা হচ্ছে।
‘এবার মুকুলে খুব হেরফের দেখা যাচ্ছে। এমনটা আগে কখনো হয়নি। মুকুল ভালো আসবে এ আশায় কয়েক দফায় বাগানে স্প্রে করছি। বালাইনাশকের দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শ্রমিকের দামও বেড়েছে। এ কারণে এবার দ্বিগুণ খচর হবে।’ বলেন আমবাগানের মালিক মেহেদী হাসান।
নিজের বাগান থেকে আম রপ্তানি করেন তরুণ উদ্যোক্তা সাপাহার বরেন্দ্র এগ্রো পার্কের স্বত্বাধিকারী সোহেল রানা। তিনি বলেন, রপ্তানিযোগ্য আমের জন্য বিশেষ যত্ন নিতে হয়। নিরাপদ আম উৎপাদনে ফ্রুট ব্যাগিং ও বেশ কিছু বিশেষ পদ্ধতি অনুসরণ করতে হয়। এবার মুকুল দেরিতে আসার কারণে আরও বাড়তি যত্ন নিতে হচ্ছে। এতে খরচের তালিকাটাও দ্বিগুণ হচ্ছে।
কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, চলতি মৌসুমে জেলায় ৩০ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে আম চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৫০০ মেট্রিকটন। এর আগে অর্থাৎ গত মৌসুমে জেলায় আম উৎপাদন হয় ২৯ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে। গত বছরের চেয়ে জেলায় এবার ৮২৫ হেক্টর বেশি জমিতে আমবাগান হওয়ায় উৎপাদন অন্য যেকোনো সময়ের রেকর্ড ভাঙবে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।
নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত বছরের তুলনায় এবার কিছুটা দেরিতে আমগাছে মুকুল এসেছে বলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। দেরিতে শীতের আগমন ও ঠান্ডা বেশি হওয়ায় মুকুল আসতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। তবে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রায় গাছে মুকুল আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এখনো সময় আছে, সুতরাং কৃষি অফিসারদের সঙ্গে পরামর্শ করে সঠিকভাবে সেচ ও বালাইনাশক স্প্রে করতে পারলে স্বাভাবিকভাবেই মুকুল আসবে এবং বাম্পার ফলনেরও সম্ভাবনা রয়েছে।
এই কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, বিলম্বে মুকুল আসায় কিছুটা বিড়ম্বনা দেখা দিলেও আমচাষিরা লাভবান হবেন। কারণ বিলম্বে ফলন আসলে আমের ভালো দাম পাওয়া যায়।