ইভিএম মেশিনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলার কারণে রাজশাহীর বাঘা পৌরসভা নির্বাচনের অনেক ভোটার বিড়ম্বনায় পড়েছেন। টানা কয়েকবার চেষ্টার পর অনেকের ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিললেও কারও কারও মেলেইনি। ফলে তাদের আর ভোট দেওয়া হয়নি। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়ানোর পরও তারা ভোট দিতে না পেরে ফিরে গেছেন। আজ বৃহস্পতিবার বাঘা পৌর নির্বাচনের কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
দুপুরে বাঘার দক্ষিণ মিলিক বাঘা মহল্লার সেকেন্দার সরকার ভোট দিতে গিয়েছিলেন গাওপাড়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্রে। কয়েকবার চেষ্টা করেও তাঁর ফিঙ্গারপ্রিন্ট মেলেনি। সেকেন্দার সরকার বলেন, ‘কিছুতেই ফিঙ্গার হচ্ছে না। প্রথমবার আসনু, বুলল পরে আবার আসেন। আরেকবার আনু, বুলল সাবান দিয়া হাত ধুইয়া আসেন। দুবার হাত ধুনু সাবান দিয়া। তাও মিলল না। তিনবার লাইনে দাঁড়িয়ে আধা ঘণ্টা করে সময় গেল, ভোট দিতে পাননু না। এখন আবার বলে পরে আসেন।’
সেকেন্দার সরকারের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন এক ব্যক্তি। তিনি সেকেন্দারকে বললেন, ‘বেশি কইরি পানি খাইয়া আসেন। দু চাড্ডি কলাও খান। তাহিলে লোগের ছাপ মিলবি।’ আসলেই এটি সত্য কি না জানতে চাইলে ওই ব্যক্তি হাসলেন। তবে নাম জানতে চাইলে বললেন না। বললেন, তিনি সেকেন্দারের ভাই।
গাওপাড়া হাফিজিয়া মাদ্রাসা কেন্দ্র থেকে ঘুরে গেছেন দক্ষিণমিলিক বাঘা মহল্লার মো. জহিরও। তিনি বলেন, ‘কঠিন ভিড় ঠেলি ভেতরে ঢুকনু। ৩০ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে ঢুকনু ঘরের ভেতরে। কিন্তু আঙুলের ছাপ আর মিলে না। বুলল, সাবান দিয়া হাত ধুইয়া আসেন। সাবান দিনু হাতে, তাও মিলল না।’
বাঘা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ফিঙ্গারপ্রিন্ট না মেলার কারণে ভোট দিতে পারেননি উত্তর মিলিকবাঘা মহল্লার আবুল হোসেন, সাইফুল ইসলাম, মনসুর আলী ও সেকেন্দার আলী। তারা ভোট দিতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। বাঘার আবদুল হামিদ দানেশমন্দ (র.) ফাজিল মাদ্রাসা ভোট কেন্দ্রের প্রিজাইডিং অফিসার মনসুর আলী জানান, তাঁর কেন্দ্রেও একই সমস্যার কারণে ১০ জনের ভোট গ্রহণ করা যায়নি।
ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিতে সমস্যা হচ্ছে স্বীকার করেছেন বাঘা উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ইমরান আলীও। তিনি বলেন, ‘যারা বয়স্ক মানুষ তাদের অনেকেরই হাতের চামড়া উঠে থাকতে পারে। যার কারণে ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলছে না। অনেকের তিন চারবার চেষ্টা করার পর ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলছে। যাদের একেবারেই মিলছে না, তাদের আবার ডাকা হচ্ছে। তা না হলে একজনকে নিয়েই বসে থাকলে ভোট গ্রহণ খুব ধীর গতিতে হবে। এমনিতেই এখানে প্রথমবারের মতো ইভিএমে ভোট হওয়ার কারণে দেরি হচ্ছে।’
যাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলছে না তাদের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে রাজশাহীর জ্যেষ্ঠ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, একবার, দুবার, পাঁচবার, চেষ্টা করতে থাকলে ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলবেই। না মেলার কোনো কারণ নেই। অনেকে হয়তো ধৈর্য হারিয়ে চলে গেছে, কিন্তু যারা থেকেছে শেষ পর্যন্ত তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট মিলেছে এবং ভোট নেওয়া হয়েছে।