গঙ্গা নদীতে দেওয়া ভারতের ফারাক্কা বাঁধের কারণে ভাটিতে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের প্রায় ২ কোটি মানুষ সেচের পানির অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দক্ষিণাঞ্চলের আরও প্রায় ৪ কোটি মানুষ ও এক-তৃতীয়াংশ এলাকা সেচের পানির অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গঙ্গা-কপোতাক্ষ প্রকল্পের ৬৫ শতাংশ এলাকায়ও সেচ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। আর্থিক হিসাবে বছরে এই ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা।
সোমবার (১৬ মে) ঐতিহাসিক ফারাক্কা লংমার্চ দিবস উপলক্ষে রাজশাহীতে ৪৬তম ফারাক্কা লংমার্চ দিবস উদ্যাপন কমিটি আজ রোববার (১৫ মে) সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানিয়েছে। রাজশাহী নগরীর একটি রেস্তোরাঁয় আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেন কমিটির আহ্বায়ক ও নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী।
মাহবুব সিদ্দিকী বলেন, পদ্মার উজানে ফারাক্কা বাঁধ নির্মাণের প্রতিবাদে ১৯৭৬ সালের ১৬ মে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে মরণবাঁধ ফারাক্কা অভিমুখে লাখো জনতার লংমার্চ অনুষ্ঠিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক চাপে ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি করে। কিন্তু পরে আন্তর্জাতিক সব আইন লঙ্ঘন করে ভারত একাই গঙ্গার পানি নিচ্ছে। এতে বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ এলাকা মরুভূমিতে পরিণত হচ্ছে।
তিনি জানান, ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাবে বাংলাদেশের মাটির উর্বরাশক্তি কমে গেছে। দেশের প্রায় ২১ শতাংশ অগভীর নলকূপ ও ৪২ শতাংশ গভীর নলকূপ ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। গঙ্গার পানি চুক্তির পর বাংলাদেশে গঙ্গার পানির অংশ দাঁড়িয়েছে সেকেন্ডে ২০ হাজার ঘনফুটের কম। অথচ ফারাক্কা বাঁধ চালুর আগে শুষ্ক মৌসুমেও বাংলাদেশ ৭০ হাজার কিউসেকের চেয়ে বেশি পানি পেত। এখন ফারাক্কা বাঁধের কারণে দেশের প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার নৌপথ বন্ধ হয়ে গেছে। আর্সেনিকের বিষাক্ত প্রভাবে পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জেলায় টিউবওয়েলের পানি খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়েছে। বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলে লবণাক্ততা বেড়ে যাওয়ায় প্রচলিত ধান উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। নদীতে মাছ না থাকায় হাজার হাজার জেলে বেকার। লবণাক্ততার কারণে পৃথিবীর বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ সুন্দরবনের প্রায় ১৭ ভাগ নষ্ট হয়ে গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ফারাক্কা লংমার্চ দিবস উপলক্ষে সোমবার বিকেলে রাজশাহী নগরীর পাঠানপাড়ায় লালন শাহ মুক্তমঞ্চে একটি জনসভার আয়োজন করা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে নদী ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের রাজশাহীর সভাপতি এনামুল হক, সাধারণ সম্পাদক আলী হোসেন পিয়ারা, রাজশাহী অ্যাডভোকেট বার সমিতির সাধারণ সম্পাদক পারভেজ তৌফিক জাহেদী, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের রাজশাহীর সাবেক সভাপতি ডা. ওয়াসিম হোসেন, বাসদের রাজশাহীর সদস্য শামসুল আবেদীন ডন, ব্যবসায়ী নেতা ফরিদ মামুদ হাসান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।