হত্যাচেষ্টা মামলায় নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের এক এসএসসি পরীক্ষার্থীকে ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে। স্বজনদের দাবি, জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধের জের ধরে পরিকল্পিতভাবে তাকে ওই মামলায় আসামি করা হয়েছে। আদালত থেকে জামিনে পেলেও মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েছে ওই শিক্ষার্থী। এ অবস্থায় তাকে নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছে পরিবার। শামনান আল মারুফ নামের ওই শিক্ষার্থী পরিবারের সঙ্গে সৈয়দপুর শহরের কলেজ পাড়ায় বসবাস করে।
দিনাজপুরের চিরিরবন্দর থানায় দায়েরকৃত ওই মামলার নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে প্রত্যাহারে দাবিতে আজ শুক্রবার দুপুরে সৈয়দপুর শহরের একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করেছেন শিক্ষার্থীর পরিবার।
লিখিত বক্তব্যে স্কুল শিক্ষার্থীর মা শারমিন খাতুন বলেন, দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার তেঁতুলিয়া ইউনিয়নের শাহাপাড়ায় আমাদের পৈতৃক নিবাস। আমার চাচা আব্দুল মজিদ ১৯৯৪ সালে ১৮ হাজার টাকায় ১৩ শতক জমি ছোট চাচা আকতার হোসেনের কাছ থেকে কেনেন। সে সময় জরুরি প্রয়োজনে জমির দলিল সম্পাদনের আগেই পুরো টাকা হাতিয়ে নেন চাচা আকতার হোসেন। পরে রেজিস্ট্রি চাওয়ায় জমির মূল দলিল ব্যাংকে আছে বলে তিনি কালক্ষেপণ করেন। পরবর্তীতে ওই চাচা এবং তার ছেলে শাহাজাহান আলী নয়ন জমিটি নিজের দখলে অপচেষ্টা চালায়। এ নিয়ে তাদের মধ্যে কয়েক দফায় বাগ্বিতণ্ডা হয়েছে।
শারমিন খাতুন আরও বলেন, স্থানীয়ভাবে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সালিস বৈঠক হয়। কিন্তু তারা বৈঠকের সিদ্ধান্ত অমান্য করে জমিটি পুনরায় তাদের দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠে। এ অবস্থায় গত ১৭ নভেম্বর তিনি ও তার ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী শামনান আল মারুফসহ ৯ জনকে আসামি করে চিরিরবন্দর থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলায় চাচাতো ভাই ইমরান হোসেনের স্ত্রী লিপিকা খাতুনকে বাদী করা হয়। ইমরান মাদক মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি।
মামলায় বলা হয়েছে, গত ১ নভেম্বর লিপিকা খাতুনের স্বামী ইমরান হোসেনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তাকে মারধর ও লুটপাট করেছেন শিক্ষার্থী শামনান আল মারুফ, তার মা শারমিন খাতুন, মামা আবু সুফিয়ানসহ তাদের স্বজনরা। এ সময় শামনান ধারালো ছুরি দিয়ে ইমরান হোসেনকে হত্যার চেষ্টা করেন বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়। অন্যান্যরা দোকান থেকে দেড় লাখ টাকার মাল লুট করে নিয়ে যান।
পরে এ ঘটনায় মামলা করেন লিপিকা খাতুন। এদিকে ওই মামলায় শিক্ষার্থী শামনানসহ অন্যান্য আসামিরা ২০ নভেম্বর আদালতে হাজির হয়ে জামিনের আবেদন করেন। আদালতের বিজ্ঞ বিচারক মামলার সকল আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেন।
এসব বিষয়ে আকতার হোসেনের ছেলে শাহাজাহান আলী নয়ন বলেন, বাবার জমি বিক্রির বিষয়টি ভিত্তিহীন। তারা অবৈধভাবে বিরোধীয় জমি দখল করে রেখেছে। দখল ছাড়তে বলেন উল্টো তারাই বাগ্বিতণ্ডা ও বিরোধে জড়াচ্ছেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সৈয়দপুর উপজেলার ছাত্র প্রতিনিধি এহতেশামুল হক সানি বলেন, জমির বিরোধকে কেন্দ্র করে একজন স্কুলছাত্রকে পরিকল্পিতভাবে আসামি করা মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। মিথ্যা মামলাটি ও চিরিরবন্দর থানার ওসিকে প্রত্যাহার দাবি জানান তিনি। তা না হলে এ ঘটনায় তারা কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
এ ব্যাপারে চিরিরবন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মালেক বলেন, বাদী কর্তৃক মামলা দায়ের করার সময় বিবাদীর মধ্যে কে ছাত্র তা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। মামলাটির তদন্ত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তার তদন্ত প্রতিবেদনেই আদালতে পাঠানো হবে।