রংপুর প্রতিনিধি
পুড়ে যাওয়া ঘরের কাঠকয়লা হাতে নিয়ে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে দেখছেন বৃদ্ধা ফজিলা বেগম। স্বামীর সংসারে ৪৫ বছরের স্মৃতি, তিলে তিলে গড়া সম্বল আগুনে পুড়ে যাওয়ায় প্রায় নির্বাক হয়ে গেছেন তিনি। দুই চোখ গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু। সেই অশ্রু মুছতে গিয়ে হাতে থাকা কালি সারা মুখে লেগে একাকার।
বিলাপ করে ফজিলা বেগম বলেন, ‘৪৫ বছর ধরি খড়কুটো যোগে সংসার করছু, শ্যাষ বয়সোত আগুন মোর সউগ শ্যাষ করি দিল। পরনের কাপড় কোনা ছাড়া কিছু বাঁচে নাই। স্বামীক নিয়া এ্যালা কোনঠে যাইম, শ্যাষ বয়সে কোনঠে মাথা গুজাইম।’
ষাটোর্ধ্ব ফজিলা বেগমের বাড়ি রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের পাঁচানী গ্রামে। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফজিলা বেগমের বাড়ি আগুনে পুড়ে যায়।
ফজিলা বেগম জানান, গতকাল সোমবার দুপুরে ঘরে তালা দিয়ে পাশের গ্রামে স্বামী আতিয়ার রহমানসহ ভাইয়ের বাড়িতে যান। সেখানে থাকা অবস্থা রাত সাড়ে ৮টার দিকে খবর পান তাঁর বাড়িতে আগুন লেগেছে। দৌড়ে বাড়িতে এসে দেখেন দুটি থাকার ঘর, রান্নাঘরসহ সব পুড়ে শেষ হয়ে গেছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে জানা গেছে, আগুনে পুড়ে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া টিনগুলো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে। সেগুলো দেখতে স্থানীয় লোকজন ভিড় করছেন। পোড়া ঘরের ভেতর থেকে ফজিলা বেগম কাঠকায়লা সরাচ্ছেন। তবে ফজিলা বেগমের পরিবার এখনো কোনো সরকারি সহায়তা পাননি।
হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য মজুমদার আলী বলেন, ‘ফজিলা ও আতিয়ার খুব গরিব মানুষ। দিনমজুরি করে সংসার চলে তাঁদের। আগুনে তিনটি ঘর পুড়ে গেছে তাঁদের। উপজেলা চেয়ারম্যান তাঁর পোড়া বাড়ি ঘুরে গেছেন। বিষয়টি ইউএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা) স্যারকে জানিয়েছি সহায়তার জন্য।’
ইউএনও রুবেল রানা বলেন, ‘অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের বিষয়ে খোঁজ খবর নিয়েছি। পরিবারটিকে উপজেলায় আসতে বলেছি। তারা টিনের পাশাপাশি সরকারি সহায়তা পাবে।’