বিদ্যালয় বন্ধ তাই তিস্তার চরে বাবার সঙ্গে ভুট্টা লাগাতে গিয়েছিল রিপন মিয়া (১৫)। সেখানে একটি বোতল সাদৃশ্য বস্তু কুড়িয়ে পায়। গুপ্তধন ভেবে তা বাড়িতে নিয়ে আসে। মা, বাবা, ভাইসহ প্লায়ার্স, রেঞ্জ দিয়ে তা খুলতে ব্যর্থ হলে দা দিয়ে কোপ মারেন। এতে সেই বস্তুটি বিকট শব্দে বিস্ফোরণ হয়ে চারজনই গুরুতর আহত হন।
আজ শনিবার বিকেলে ৫টার দিকে ঘটনাটি ঘটেছে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের জিগাবাড়িচর এলাকায়। আহতদের সন্ধ্যা ৭টার দিকে চারটি অ্যাম্বুলেন্সে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দুর্ঘটনার শিকার আব্দুল হাকিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ভুট্টা খেতোত ছাওয়াটা বোতলের মতোন শ্যামলা রঙের একটা জিনিস পাইছে। তার ভেতর কী আছে দেখির তকনে বাড়িত আনি খুলিবার ধরছে, খোলে না। দাও দিয়া সেইটাত চোট মারছে এরপর ভাটাস করি বিরাট শব্দ। জ্ঞান ফিরি দেখো সুন্দরগঞ্জ হাসপাতালোত। দুই বেটারে চোখ গেইছে। বউটার অবস্থাও মোর খারাপ। ওটে থাকার ডাক্টার সামলার পায় নাই, রংপুর পাটে দিছে। আল্লাহ জানে হামার কপালোত কী আছে?’
আহতদের পরিবার, স্বজন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, কুড়িগ্রামের উলিপুর ও গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের সীমান্ত এলাকা সাতা নষ্কর তিস্তার চরে ভুট্টা লাগাতে যান সুন্দরগঞ্জের বেলকা ইউনিয়নের জিগাবাড়িচর এলাকার বাসিন্দা আব্দুল হাকিম ও তাঁর দুই ছেলে ফারুক হোসেন (১৮) ও রিপন হোসেন (১৫)। সেখানে রিপন হোসেন বোতল সাদৃশ্য একটি বস্তু কুড়িয়ে পান। সেটি গুপ্তধন ভেবে বাড়িতে নিয়ে আসেন।
এরপর ভেতরে কী আছে তা দেখতে মা, বাবা, ভাইসহ খোলার চেষ্টা করেন। এরপর দা দিয়ে সেটিকে কোপ দিলে তা বিস্ফোরণ হয়ে রিপন হোসেন, তাঁর বাবা আব্দুল হাকিম, মা পারভিনা বেগম ও বড় ভাই ফারুক হোসেন গুরুতর আহত হন। বিকট শব্দে প্রতিবেশী ও স্থানীয়রা ছুটে গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে প্রথমে সুন্দরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং পরে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করান।
রমেক হাসপাতালে আহতদের সঙ্গে আসা বেলকা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও প্রতিবেশী মজিবর রহমান মজি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাশাপাশি বাড়ি। বিকট শব্দ শুনে আব্দুল হাকিমের বাড়িতে গিয়ে দেখি রক্তাক্ত শরীরে পড়ে আছে সবাই। তাদের উদ্ধার করে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে সুন্দরগঞ্জ হাসপাতালে নিয়ে আসি। সেখান থেকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চারটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়া আসছি। আব্দুল হাকিমের ছেলে গুপ্তধন ভেবে তিস্তার চরে পাওয়া একটি বোতল কাটতে গিয়ে বিস্ফোরণের শিকার হন।’
সুন্দরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক সুবর্ণা ইসলাম বলেন, অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাঁদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতদের মধ্যে বড় ছেলে ফারুকের ডান পাসহ বাঁহাতের কবজি ও ছোট ছেলে রিপনের ডান চোখ এবং বুকে জখম হয়েছে।
সুন্দরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আজমিরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, খবর পাওয়ার পরপরই ঘটনার দুটি স্থানে পুলিশ পরিদর্শন করা হয়েছে। কুড়িয়ে পাওয়া বস্তুটি গুপ্তধন ভেবেছিলেন আহত ব্যক্তিরা। কাচের বোতলটি দা দিয়ে কাটার সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।
তবে বিস্ফোরক জাতীয় দ্রব্যটি সম্প্রতি ভারতের সিকিমে ভয়াবহ বন্যায় ভেসে আসে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই বলে জানিয়েছেন সুন্দরগঞ্জ থানার ওসি।