শিপুল ইসলাম, রংপুর
রংপুরের মিঠাপুকুরে টিআর, কাবিখা ও কাবিটা প্রকল্পের লাখ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ছিলেন প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) মনিরুজ্জামানসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। এ বিষয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
পিআইওর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে শুকুরেরহাট ডিগ্রি কলেজের উন্নয়নের জন্য টিআরের (গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষণাবেক্ষণ) আওতায় বরাদ্দ দেওয়া হয় ৩ লাখ টাকা। কিন্তু প্রকল্পের সভাপতি শওকত হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, তাঁকে পিআইও কার্যালয় থেকে দুই দফায় শুধু ১ লাখ ১০ হাজার টাকা দেওয়া হয়।
অন্যদিকে শুকুরেরহাট ইসলামিয়া আলিম মাদ্রাসায় নেওয়া টিআর প্রকল্পের সভাপতি আব্দুল কাইয়ূম অভিযোগ করেন, তাঁর কাছ থেকে ৩ লাখ টাকার কাগজপত্রে স্বাক্ষর নিলেও দুই দফায় দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা।
এ ছাড়া ২০২২-২৩ অর্থবছরে চেংমারী ও দুর্গাপুর ইউনিয়নে ১ কোটি টাকায় টিআরের ৩১টি এবং কাবিখার (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) ২০০ টন চালে ২৭টি প্রকল্প নেওয়া হয়। কিন্তু প্রকল্প সভাপতি হওয়া ১০ জন ইউপি সদস্যের সঙ্গে কথা হলে তাঁরা দাবি করেন, কেউই ব্যাংক থেকে টাকা তোলেননি এবং জানেন না বরাদ্দের বিষয়টিও।
আরও অভিযোগ রয়েছে, পিআইওর কার্যালয় উন্নয়নের জন্য দুই অর্থবছরে প্রায় ১১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও তেমন কোনো কাজই করা হয়নি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অফিসের একজন কর্মচারী বলেন, ‘শুধু আরামের জন্য অফিসে এসি লাগানো হয়েছে। বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পিআইও মনিরুজ্জামান কোনো সদুত্তর না দিয়ে জানান, এসব বিষয়ে পরে কথা বলবেন।
তা ছাড়া, গত ৩০ জুনের আগে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ কাগজে-কলমে শতভাগ দেখিয়ে ট্রেজারি অফিস থেকে সব বিল পাস করে পিআইও মনিরুজ্জামান ব্যক্তিগত ব্যাংক হিসাবে প্রায় ৩ কোটি টাকা রাখেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ নিয়ে কথা হলে রংপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল বলেন, প্রকল্পের সরকারি টাকা ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টে রাখার কোনো সুযোগ নেই। যদি এমন হয়ে থাকে তাহলে তদন্ত করে ওই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দুর্নীতির অভিযোগ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘পিআইওর বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছি। সেগুলো তদন্ত করতে দুদকে পাঠিয়েছি।’
জানতে চাইলে রংপুর জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন বলেন, ‘ওই প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কিছু অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ পেয়েছি। সেগুলো তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সত্যতা পাওয়া গেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
বদলি ঠেকাতে মামলা: এদিকে ১১ নভেম্বর পিআইও মনিরুজ্জামানকে বদলি করা হয়। তাঁর স্থানে যোগদান করেন গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার পিআইও মো. ওয়ালিফ মণ্ডল। কিন্তু মনিরুজ্জামান দায়িত্ব বুঝিয়ে না দিয়ে বদলি ঠেকাতে মামলা করেছেন। মামলায় ২৮ নভেম্বর শুনানির পর ১৬ জানুয়ারি পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে।
নতুন পিআইও ওয়ালিফ বলেন, ‘যোগদান করেছি কিন্তু দায়িত্ব বুঝিয়ে না দেওয়ায় চেয়ার পাচ্ছি না।’ এখনো মিঠাপুকুরে থাকা মনিরুজ্জামান বলেন, ‘আমাকে অন্যায়ভাবে বদলি করা হয়েছে। সেই বদলি আদেশ স্থগিত চেয়ে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে (প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে) মামলা করেছি।’ শুনানি না হওয়া পর্যন্ত তাঁর এখানে থাকতে কোনো বাধা নেই বলে দাবি করেন তিনি।