রংপুর শহরের বিভিন্ন সড়কে অবৈধভাবে চলছে সহস্রাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা। সড়কে চলাচল নির্ঝঞ্ঝাট ও নির্বিঘ্ন করতে অবৈধ এসব অটোরিকশার প্রতিটি থেকে প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। তাতে মাসে চাঁদা আদায়ের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে প্রায় অর্ধকোটি টাকা। ‘ওপরমহল ম্যানেজ করার জন্য’ এসব টাকা আদায় করছেন কয়েকজন মোটরশ্রমিক। তবে তাঁদের পেছনে কে বা কারা আছেন, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
গত রোববার সরেজমিন ঘুরে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের মোড় থেকে কালীগঞ্জ সড়ক, দর্শনা-ভেন্ডাবাড়ী, মাহিগঞ্জ-পীরগাছা, বাস টার্মিনাল-বদরগঞ্জ, সাতমাথা-কুড়িগ্রামসহ কয়েকটি সড়কে সহস্রাধিক অবৈধ সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। রংপুর শহরের বাংলাদেশ মোড় এলাকার গঙ্গাচড়া সড়কে শতাধিক অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
সেখান থেকে ভাড়া নিয়ে চালকেরা যাচ্ছেন মহিপুর হয়ে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জে। সেখানে শতাধিক অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থাকায় সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক অটোরিকশাচালক বলেন, ‘আমাদের গাড়ি অবৈধ। আগে প্রায়ই ট্রাফিক পুলিশ ধরে মামলা দিত। এখন আর দেয় না।’ এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখানে রাকিবুল ইসলাম রাকু নামের এক যুবক প্রেত্যেক গাড়িচালকের কাছ থেকে ১৫০ টাকা করে চাঁদা নিচ্ছেন। এই টাকা দিয়ে তিনি ওপরে সামলান। এখন নির্ভয়ে গাড়ি চালাচ্ছি। কোনো পুলিশি ঝামেলায় পড়তে হচ্ছে না।’
ওই রুটে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলে ১৪০টি। তাতে প্রতিদিন চাঁদা আদায় হচ্ছে ২১ হাজার টাকা। চাঁদা আদায়ের বিষয়টি স্বীকার করে রাকিবুল ইসলাম রাকু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সবাই দেড় শ টাকা দেন না। কেউ কম দেন। ২১ হাজার টাকা কালেকশনের কথাটা সঠিক নয়। প্রতিদিন সড়ক থেকে কালেকশন হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা।’ এই টাকা কোথায় যায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাই, বোঝেন না, অবৈধ গাড়ি সড়কে চললে কারা টাকা খায়? এটা কি বলতে হয়? সবাইকে থামাতে হয়।’
রংপুর সিটির সাতমাথা থেকে কুড়িগ্রাম মহাসড়কে চলাচল করছে শতাধিক সিএনজিচালিত অটোরিকশা। সাতমাথায় প্রতিদিন প্রতিটি অটোরিকশাচালকের কাছ থেকে ২০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করছেন আনোয়ার হোসেন ও জাকির হোসেন চৌধুরী। তাঁরা দুজন মোটরশ্রমিক নেতা দাবি করে এই চাঁদা আদায় করছেন। অটোরিকশাচালক সাগর আলী বলেন, ‘৫ লাখ টাকায় সিএনজি অটোরিকশা কিনেছি। আগে গাড়ি সড়কে তুললেই ট্রাফিকের মামলা খেতে হতো। এখন মোটরশ্রমিক নেতাদের ২০০ টাকা করে চাঁদা দেওয়ায় আর সমস্যা হচ্ছে না।’
রোস্তম আলী নামের আরেক অটোরিকশাচালক বলেন, ‘সরকার আমাদের গাড়ির লাইসেন্স দিলে কাউকে চাঁদা দিতে হইতো না। চাঁদা দেওয়ার টাকাটা সরকার পাইত।’
সড়কে চাঁদা আদায়ের কারণ জানতে চাইলে শ্রমিক নেতা জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, ‘গাড়িগুলো অবৈধ হওয়ায় ঠিকভাবে তাঁরা সড়কে চালাতে পারেন না। তাই তাঁদের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে গাড়িগুলো চালানোর ব্যবস্থা করেছি। প্রতিটি গাড়ি থেকে ২০০ টাকা আদায় করছি। এর মধ্যে আমরা পাই ৫০ টাকা, বাকি ১৫০ টাকা চলে যায় ওপরে।’ ওপর কোথায় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরাসরি কারও নাম বলতে পারব না, ধরে নেন। আগে তাদের গাড়ি সড়কে উঠলেই আটক করে হয়রানি করা হতো। এখন করা হয় না।’
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) মো. মেনহাজুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সিএনজিচালকেরা গরিব মানুষ। মানবিক কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ট্রাফিক পুলিশের নামে কেউ চাঁদা নিতে পারে না। বিষয়টি আগে কেউ আমার নজরে দেয়নি। বিষয়টি সিরিয়াসলি দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
আজ মঙ্গলবার সকালে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সড়কে চাঁদা তোলার বিষয়টি আমার জানা নেই। বিষয়টি এখনই দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি।’