'সোনালি আঁশের দেশ বাংলাদেশ'—এই নামে বাংলাদেশকে আর ডাকাই হয় না। আবহাওয়ার বৈরী আচরণে উৎপাদন কমে যাওয়া এবং পাটের ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে পাটের চাষ ছেড়েই দিয়েছেন অধিকাংশ কৃষক। দেশের অধিকাংশ কৃষকের মধ্যেই পাট চাষের প্রতি আর তেমন আগ্রহ নেই। কিন্তু এর বিপরীতে কিছু কৃষক তাঁর জমিতে করেছেন পাটের চাষ। এবং তাঁর উৎপাদিত সোনালি আঁশের পাট নিয়ে শোনাচ্ছেন আশা, ভরসা ও সাফল্যের কথা। বৈশ্বিক মহামারিতে আবহাওয়া, জলবায়ু, প্রকৃতির মধ্যে ছিল পরিবর্তন। আর এমন প্রকৃতিই আশীর্বাদ হয়ে এসেছে জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার কৃষকদের সোনালি আঁশের জমিতে।
আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার কৃষকের খেতে সোনালি আঁশ পাটের অনেক বেশি ফলন হয়েছে। একই সঙ্গে সরকারের দেওয়া লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অতিরিক্ত জমিতে কৃষকেরা পাট চাষ করেছেন। কৃষকদের নেওয়া সেই ঝুঁকিই তাঁদের মুখে এখন ফোটাচ্ছে উৎফুল্লতার হাসি।
কৃষকেরা বলছেন, বাজার বাড়ছে। ফলন যেমন ভালো হয়েছে, তেমনি দামও ভালো পাবেন তাঁরা। গত বছর পাটের দাম তুলনামূলক ভালো পাওয়ায় এ বছরও অধিক জমিতে পাটের চাষ করেন এই উপজেলার কৃষকেরা। এ বছর বৃষ্টি কম হয়েছে, যদি বৃষ্টি আরও বেশি হতো, তাহলে পাটের মান আরও ভালো হতো বলে মনে করছেন কৃষকেরা। মান ভালো হলে দামটাও ভালো পেতেন তাঁরা। কৃষকেরা এখন পাট কাটা, পনিতে জাগ দেওয়া ও ধোয়ার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। অনেকেই পাট তুলেছেন বাজারে।
উপজেলার কোতোয়ালীবাগ গ্রামের কৃষক আবদুল আজিজ, রতনপুরের মামনুর রশিদ ও মালিদহ গ্রামের মিজানুর রহমান জানান, ' জমিতে হালচাষ, সার-বীজ, সেচ-নিড়ানি, পাট কর্তন, ধোয়া আর শুকানোসহ বিঘাপ্রতি খরচ ৭ থেকে ৮ হাজার টাকার মতো। এবার প্রতি বিঘায় পাট পাওয়া যাচ্ছে ১০-১২ মণ। ৩ হাজার টাকা মণ দরে বিক্রয় করলেও প্রায় ৩৬ হাজার টাকা হয়। এতে খরচ বাদে বিঘা প্রতি ২৫-৩০ হাজার টাকা লাভ হবে।' অপরদিকে পাটখড়ি পেয়ে কৃষানিও বেশ খুশি বলে জানান তাঁরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ লুৎফর রহমান বলেন, উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও অতিরিক্ত ১ হাজার ৫৫০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। এতে করে কৃষকদের মধ্যে একরকম সন্তুষ্টি দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশে গবেষণা দ্বারা উদ্ভাবিত রবি-১ ও ফাল্গুনি তোষা জাতের পাটের গুণমান আরও ভালো বলেও তিনি জানান।