সিলেটে আজ সোমবার ভোর থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নগরের অধিকাংশ এলাকা। এতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। পবিত্র ঈদুল আজহার দিনে শুরু হওয়া এই জলাবদ্ধতায় ভোগান্তিতে পড়েছেন নগরের বাসিন্দারা। বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতার কারণে ঈদগাহে হয়নি ঈদের জামাত। স্থানীয় মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হলেও দেরিতে শুরু হয়।
সিলেট আবহাওয়া অধিদপ্তরের সহকারী আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজীব হোসাইন জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় (গতকাল সকাল ৬টা থেকে আজ সকাল ৬টা) সিলেটে ১৭৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আজ সকাল ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। বৃষ্টিপাত আগামী ৩ থেকে ৪ দিন অব্যাহত থাকবে।
ভারী বৃষ্টিতে পানিতে তলিয়ে যায় নগরের অধিকাংশ রাস্তাঘাট। মানুষ বাসাবাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। নগরের অভিজাত উপশহর, তেরোরতন, সোনারপাড়া, লামাপাড়া, শিবগঞ্জ, মেজরটিলা, কেওয়াপাড়া, তালতলা, জামতলা, সোবহানীঘাট, যতরপুর, মাছিমপুর, পাঠানটুলা, দরগামহল্লা, কাজলশাহ, পায়রাসহ শতাধিক এলাকায় বৃষ্টির পানি জমেছে। অনেক এলাকার বাসা ও দোকানে পানি ঢুকে পড়েছে। কোথাও কোথাও ছিল হাঁটু থেকে কোমরসমান পানি।
নগরের বাসিন্দারা ঈদগাহের পরিবর্তে ঈদের জামাত আদায় করছেন মসজিদে। আবার অনেক এলাকায় সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতার কারণে সকাল ৮টার পরিবর্তে ১০টায় স্থানীয় মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ছাড়া নগরের অনেক এলাকা প্লাবিত হওয়ায় কোরবানি দিতেও ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে বাসিন্দাদের। অনেকে জলাবদ্ধতার কারণে কোরবানি দিতে পারছেন না। সকাল থেকে এ পর্যন্ত চলছে গুঁড়ি গুঁড়ি থেকে শুরু করে মুষলধারে বৃষ্টি। এ নিয়ে ১৫ দিনের ব্যবধানে পঞ্চমবারের মতো নগর প্লাবিত হলো।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের সুরমা, কুশিয়ারা ও সারি—এই তিনটি নদীর তিনটি পয়েন্ট দিয়ে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর সুরমা নদীর সিলেট পয়েন্ট দিয়ে ১০ দশমিক ৩৪ মিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। যেখানে বিপৎসীমা ১০ দশমিক ৮০ মিটার।
এদিকে তৃতীয়বারের মতো পানিতে ডুবল সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এতে ব্যাহত হয় চিকিৎসাসেবা। হাসপাতালে হাঁটুসমান পানি থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন চিকিৎসক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, রোগী ও রোগীর স্বজনেরা।
সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সৌমিত্র চক্রবর্তী আজকের পত্রিকাকে বলেন, সকাল ৬টায় ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিচতলায় পানি ঢোকে। এতে নিচতলার সব ওয়ার্ড, অফিসসহ সব বিভাগ পানিতে তলিয়ে হয়। হাঁটুসমান পানি থাকায় মেঝেতে যেসব রোগী ছিলেন, তাঁরাও ওপরে ওঠেন।
হাসপাতালের এই উপপরিচালক আরও বলেন, ‘নিচতলায় পানি প্রবেশ করায় আমাদের চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হয়। হাঁটুসমান পানি থাকায় চিকিৎসক, রোগী ও রোগীর স্বজনসহ সবাই সমস্যায় পড়েন। এভাবে বারবার হাসপাতাল ডুবতে থাকলে নানা রোগে আরও আক্রান্ত হবেন রোগীরা। চিকিৎসকদের ভোগান্তি কোনোভাবেই শেষ হবে না। পৌনে ২টার দিকে হাসপাতালের নিচতলা থেকে পানি নামে।’
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) জনসংযোগ কর্মকর্তা সাজলু লস্কর আজকের পত্রিকাকে বলেন, নগরে ভোর থেকে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হওয়ার কারণে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এ কারণে বিপাকে পড়েন নগরের বাসিন্দারা। বৃষ্টিপাতে কারও হাত নেই। একদিকে নগরে টানা ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে, অপর দিকে পাহাড়ি ঢল নামছে। ফলে পানি জমা পড়েছে। সিসিকের কর্মচারীরা কাজ করছেন। এখন অনেক এলাকার পানি নেমে গেছে। আশা করা যায়, খুব দ্রুত সব এলাকার পানি নেমে যাবে।
আরও পড়ুন—