সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনার সহকারী (ইউএফপিএ) মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে অনিয়ম-দুর্নীতি ছাড়াও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে বিদেশে লোক পাঠানোর নামে বিপুল টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। এ ছাড়া তিনি অবৈধ সম্পদের তথ্য ঢাকতে কথিত সামাজিক ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়েছেন বলেও জানা গেছে।
জাহাঙ্গীর আলম নিজেই জনসমক্ষে দম্ভ করে বলেন, ‘আমি জাহাঙ্গীর আলম, কানাইঘাট বাড়ি হয়েও সেন্ট্রাল কমিটির (বাংলাদেশ উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা সহকারী সমিতি) প্রেসিডেন্ট হই। আমি চাকরিকে ভয় পাই না। চাকরিটা শুধু আমার স্ত্রীর জন্য করি।’ অফিসে আসা-যাওয়ার যে পরিমাণ টাকা খরচ হয়, তাতে তাঁর পোষে না। তাঁর স্ত্রীর সেফটির (সুরক্ষা) জন্য শুধু চাকরিটা করেন।
সিলেট-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী তাঁর বিরুদ্ধে মহাপরিচালকের কাছে একাধিকবার অভিযোগ দিয়েছেন। শেষমেশ এমপি তাঁর কাছে সারেন্ডার (হার) করেন এবং তৎকালীন ডিজি মহোদয় কল দিয়ে এমপিকে বলেন, আপনি জাহাঙ্গীর সাহেবের বিষয়টি আরেকটু চিন্তা করেন।
আর্থসামাজিক উন্নয়নের ভেলকি
সিলেট বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় কর্মরত বিশ্বস্ত ও আস্থাভাজন সহকর্মীদের নিয়ে জাহাঙ্গীর ২০১৪ সালে ‘সিলেট ডেভেলপমেন্ট বিজনেস গ্রুপ’ নামের একটি ব্যবসায়িক সমিতি গঠন করেন। সমিতির অর্থ জাহাঙ্গীর নিজের কাছে রেখে অন্যান্য ব্যবসা পরিচালনা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে অনেকে লাভের আশায় টাকা বিনিয়োগ করে এখন মূলধন হারাতে বসেছেন। বিজনেস গ্রুপের বর্তমান সদস্যসংখ্যা ৫০ জনের মতো এবং জাহাঙ্গীর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও পরিচালক। এ ছাড়া একই সময়ে ‘সিলেট ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন’ নামের সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়েছেন। কিন্তু এটির কোনো সামাজিক কার্যক্রম দৃশ্যমান ছিল না। নানা প্রলোভনে কিছু লোককে তিনি এটিতে ভিড়িয়েছিলেন।
সিলেট ডেভেলপমেন্ট বিজনেস গ্রুপ, সিলেট ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও ইউএফপিএ বিভা রানী দেবী ও পিয়াস কান্তি দাস বলেন, ‘(প্রতিষ্ঠান দুটির) কার্যক্রম সম্পর্কে আমরা কিছু জানি না। কয়েক দিন আগে নাম পরিবর্তন হয়েছে। যিনি প্রধান, জাহাঙ্গীর আলম, তিনি ভালো বলতে পারবেন।’
ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খুলে টাকা আত্মসাৎ
ইউএফপিএ জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে বিভিন্ন দেশে লোক পাঠানোর কথা বলে বিপুল টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তাঁর নগরের শাহজালাল (রহ.) উপশহর এলাকায় জে আর আইপ এজেন্সি ও থার্ড আই আইটি টেক নামের দুটি ট্রাভেলস এজেন্সি রয়েছে।
পরিবার পরিকল্পনা সিলেট জেলার একজন অফিস সহকারী বলেন, ‘সাবেক ডিজির পিএ এনামুলসহ আমাদের কয়েকজনের পাসপোর্ট নিয়েছিল আমেরিকার একটি খেলার ইভেন্টের জন্য ভিসা করে দেবে বলে। কিন্তু কিছু করে দিতে পারেনি। বরং জনপ্রতি ৪০ হাজার টাকা করে লোকসান হয় আমাদের।’
পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অফিস সুপার এনামুল হক আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘অনেক পুরোনো ঘটনা তো কত টাকা নিয়েছিল এখন মনে নেই।’
স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা: নিজের অবৈধ অর্থ-সম্পত্তি জায়েজ করতে জাহাঙ্গীর সিলেট নগরের উপশহরের নিজস্ব বাসা ছালেহা মঞ্জিলে ‘হলি সিটি ক্রিয়েটিভ স্কুল অ্যান্ড কলেজ’ প্রতিষ্ঠা করেন। ওই স্কুল অ্যান্ড কলেজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর জাহাঙ্গীর নিজেই। সিলেট শিক্ষা বোর্ড ও সিটি করপোরেশনে গিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের কোনো ধরনের অনুমোদনপত্র পাওয়া যায়নি।
এ ছাড়া জাহাঙ্গীর আলমের ভাষ্যমতে, সরকারের কাছে তথ্য গোপন করে বা অনুমতি না নিয়ে তিনি ১১ বার বিদেশ গমন করেছেন। বিদেশ গমনের বিভিন্ন স্থির ও ভিডিওচিত্র নিজের ইউটিউব চ্যানেল ও পেজে প্রচার করেন তিনি।
অভিযোগ অস্বীকার করে ইউএফপিএ মো. জাহাঙ্গীর আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, আর্থিক ও সামাজিক উন্নয়নভিত্তিক ব্যবসা, স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ যত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত, সব কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে করছেন।