হোম > অর্থনীতি

টাস্কফোর্সের প্রতিবেদন

বিনিয়োগ টানতে ৩১ সুপারিশ

মাহফুজুল ইসলাম, ঢাকা

ছবি: সংগৃহীত

দেশে বিনিয়োগ পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। উন্নয়নের চেষ্টা চলছে, তবে পরিকল্পনা গ্রহণে দেখা যাচ্ছে বিশৃঙ্খলা। এর পাশাপাশি আইনি জটিলতা এবং বাস্তবায়নের দুর্বলতা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারি সেবা এবং বিদ্যমান অর্থনীতির নানামুখী সমস্যাও এই অবস্থা থেকে উত্তরণের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।

এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এবং দেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ভিত্তি সুদৃঢ় করতে অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থনীতিসংক্রান্ত টাস্কফোর্স একটি পথনির্দেশনা নিয়ে আসছে। কমিটির সদস্যরা দীর্ঘ গবেষণা এবং সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবতার ভিত্তিতে ৩১টি সুপারিশ প্রণয়ন করেছেন।

বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে এই সুপারিশগুলোতে এমন কিছু নতুন দিক তুলে ধরা হয়েছে, যেগুলো এত দিন সম্পর্কিত বলে বিবেচিত হয়নি। এগুলোর বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্থনীতিতে সম্পদের প্রবাহ বৃদ্ধি এবং একটি টেকসই উন্নয়নকাঠামো নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

এখন প্রশ্ন হলো, পরিকল্পনাগুলো কতটা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা হবে এবং এর মাধ্যমে বিনিয়োগের ক্ষেত্র কতটা সুশৃঙ্খল ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। টাস্কফোর্সের এই উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সমন্বিত প্রচেষ্টা ও মনোযোগ অপরিহার্য।

উল্লেখযোগ্য সুপারিশগুলো হলো, দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী করতে ১০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ পণ্য রপ্তানির সক্ষমতা রয়েছে এমন ১ হাজার ৫০০ কোম্পানিকে বাছাই করে তাদের প্রতি বিশেষ নীতিসহায়তা দেওয়ার পরিকল্পনা গ্রহণ; পাশাপাশি এসএমই খাতকে এগিয়ে নিতে রাজধানীতে ‘ঢাকা হাট’ নামের একটি বিশেষ কেন্দ্র গঠন করার উদ্যোগ, যা ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের ব্যবসা সম্প্রসারণে সহায়তা করবে।

দেশে আন্তর্জাতিক মানের হাসপাতাল স্থাপনের জন্য বিদেশি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা হচ্ছে, যা উন্নত চিকিৎসাব্যবস্থার দ্বার উন্মোচন করবে। বিভিন্ন শিল্প ও সেবা খাতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির প্রয়োগ বাড়িয়ে উৎপাদনশীলতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

পরিবেশ পুনরুদ্ধারের অংশ হিসেবে বুড়িগঙ্গা নদীর পুনরুজ্জীবন এবং অন্যান্য নদীর নাব্যতা বাড়ানোর প্রকল্প গ্রহণ, যা দেশের পরিবেশ ও নৌপরিবহন-ব্যবস্থায় ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। এ ছাড়া বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকার জন্য ‘গ্লোবাল এক্সিলেন্স সেন্টার’ গঠন এবং রাষ্ট্রীয় এয়ারলাইনস বাংলাদেশ বিমানের পুনর্মূল্যায়নের মাধ্যমে এর দক্ষতা ও সেবার মান উন্নত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়িত হলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং জাতীয় সক্ষমতা বাড়ার একটি সুদূরপ্রসারী সম্ভাবনা তৈরি হবে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে অর্থনৈতিক কৌশল পুনর্নির্ধারণ এবং প্রয়োজনীয় সম্পদ আহরণের লক্ষ্যে একটি টাস্কফোর্স গঠন করা হয়। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক কে এ এস মুরশিদকে এই টাস্কফোর্সের প্রধান করা হয়।

বর্তমানে এসব প্রস্তাবের যৌক্তিকতা আরও গভীরভাবে যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কমিটির সুপারিশ সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করা হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা এবং সম্পদ সংগ্রহে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

কে এ এস মুরশিদ আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন, কমিটির প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং এটি বর্তমানে সম্পাদনার পর্যায়ে রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে কে এ এস মুরশিদ জানান, প্রতিবেদনে দেশের অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি বিশদভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। বিদ্যমান সংকটগুলো চিহ্নিত করার পাশাপাশি সমাধানের উপায়ও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মাধ্যমে সরকারের জন্য করণীয় নির্ধারণ সহজ হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

প্রতিবেদনে দেশের বিনিয়োগযোগ্য খাতগুলোর বিশদ বিবরণ উঠে এসেছে। অর্থনীতির মৌলিক বিষয়গুলোর পাশাপাশি স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাত বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। যদিও সুপারিশগুলো নিয়ে স্থানীয় স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের মধ্যে কিছু বিরোধ দেখা দিতে পারে, তবু এসব প্রস্তাব দেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের পথ দেখাবে। এগুলো জনস্বার্থমূলক এবং বৈদেশিক অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং সেবার মান উন্নত করতে সহায়ক হবে।

প্রতিবেদনে বিনিয়োগ বাড়াতে শিল্প-কারখানায় গ্যাস ও বিদ্যুৎ-সুবিধা নিশ্চিত করা, বাজার ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি বন্ধ করার সুপারিশ করা হয়েছে। সরকারি দপ্তরগুলোকে প্রশিক্ষিত করা, সেবা সহজীকরণ এবং ওয়ান-স্টপ সেবা চালুর ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

শ্রমবাজারের চাহিদা অনুযায়ী দক্ষ শ্রমশক্তি তৈরির পাশাপাশি রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনা এবং তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর প্রস্তাবও প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে।

জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এবং গবেষণাপ্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান আজকের পত্রিকাকে বলেন, যেসব সুপারিশ করা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের মানুষ সহজে সরকারি সেবা পাবে, ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে।

প্রতিবেদনে রাজধানীর একটি সরকারি হাসপাতাল ও গ্রামীণ স্কুল-ক্লিনিক সংস্কারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। বিআরটিএ সংস্কার, রিয়েল-টাইম ডেটা ব্যবহারের জন্য যুব ও নাগরিক পর্যবেক্ষণ দল গঠনের প্রস্তাব এসেছে।

সামাজিক ও আচরণগত পরিবর্তনে গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়েছে। ব্যবসা ও বিদেশি বিনিয়োগের পথে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণ দূর করতে নিয়ন্ত্রক সংস্কার কমিশন এবং চাঁদাবাজি মোকাবিলায় স্বাধীন ‘অ্যান্টি-গুন্ডা স্কোয়াড’ প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়েছে।

ছয় বছরে পাঁচ পিডি, আর্থিক বরাদ্দেও কোপ

এক যুগের মধ্যে সর্বনিম্ন বিদেশি বিনিয়োগ

সারা দেশে মিলবে ইনসেপ্টার মেনিনজাইটিস টিকা

এলসি চালুর দাবিতে সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বেক্সিমকো

১২০০ কোটির টাকার বন্ড ছাড়বে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক

এপেক্সের ৫০ হাজার শেয়ার কিনবেন সৈয়দ মঞ্জুর এলাহী

জিডিপিতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অবদান প্রায় ২৮ শতাংশ

শিল্প কাঁচামাল আমদানিতে সাময়িক ছাড়পত্র দেবে বিএসটিআই

সিএসইতে লেনদেনের সময় পরিবর্তন, শেয়ারবাজারে কারসাজির আশঙ্কা

বিনোদনের সংজ্ঞা পাল্টে দিচ্ছে হালের নিও কিউএলইডি টেলিভিশন

সেকশন