কমেছে পেঁয়াজ ও চিনির দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা

প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০: ১৭
ফাইল ছবি

বেশ কিছুদিন বাড়তি দামে বিক্রি হওয়ার পর খুচরায় কমতে শুরু করেছে পেঁয়াজ, চিনি ও ছোলার দাম। সবজির দামও কিছুটা কমার দিকে। তবে চাল, ডাল, তেল, আটা, ময়দা, ডিম, ব্রয়লার মুরগিসহ বাকি প্রায় সব খাদ্যপণ্যই আগের বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।

এদিকে বাড়তি দাম দিয়েও চাহিদামতো ভোজ্যতেল মিলছে না বলে অভিযোগ করেছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচাসহ কয়েকটি বাজার ঘুরে এ তথ্য পাওয়া যায়।

গতকাল সেগুনবাগিচা বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছিল ১২৫-১২৬ টাকা কেজি দরে। এই বাজারে সপ্তাহখানেক আগেও চিনির খুচরা দাম ছিল ১২৮-১৩০ টাকা।

দোকানিরা জানিয়েছেন, তাঁদের প্রতি কেজি চিনি খরচসহ কেনা পড়ছে ১১৯-১২০ টাকা। সপ্তাহখানেক আগে তা ১২৭-১২৮ টাকা ছিল।

খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে চিনির সরবরাহ বাড়তে থাকায় দাম কমছে। তবে যে হারে শুল্ক কমেছে, তাতে দাম আরও কমা উচিত বলে দাবি করেন তাঁরা।

দেশের চিনি আমদানিকারক ও উৎপাদকেরা অনেক দিন ধরে বলছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়া এবং দেশে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বাজারে চিনির দাম বেড়েছে। আমদানিতে উচ্চ হারের নানা ধরনের শুল্ক-করের কারণে দেশের বাজারে চিনির দাম প্রতিবেশী দেশের চেয়ে অনেক বেশি। এমন প্রেক্ষাপটে গত ৮ অক্টোবর পরিশোধিত ও অপরিশোধিত চিনির ওপর বিদ্যমান নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক ৩০ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করে এনবিআর। এরপর পরিশোধিত চিনির সরবরাহ আরও বাড়াতে ১৭ অক্টোবর পরিশোধিত চিনির ওপর বিদ্যমান আমদানি শুল্কে ছাড় দেয় সংস্থাটি। তাতে প্রতি টন চিনির আমদানি শুল্ক ৬ হাজার থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকায় নেমে আসে। এই ছাড়ের পর প্রতি কেজি চিনি আমদানিতে ব্যয় ১১ টাকা কমার কথা।

ছোলার দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার পর চলতি সপ্তাহে কিছুটা কমেছে। পণ্যটির দাম গত সেপ্টেম্বরের শুরুতে বেড়ে খুচরায় ১৪০ টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। বিক্রেতারা জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে ১০-১৫ টাকা কমেছে ছোলার দাম। গতকাল সেগুনবাগিচা বাজারে বিক্রি হয়েছে ১২৫-১৩০ টাকা কেজি দামে।

রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে পাইকারিতে ছোলা ১১৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। এক সপ্তাহ আগে ছিল ১২৮ টাকা পর্যন্ত।

সাধারণত রোজার মাসে চিনি ও ছোলার চাহিদা অনেক বাড়ে। তার মাসখানেক আগে থেকেই দাম বাড়তে থাকে। কিন্তু এবার তিন-চার মাস আগেই দাম বেড়ে গিয়েছিল।

সেগুনবাগিচা বাজারের মুদি পণ্যের বিক্রেতা ‘মা বাবার দোয়া স্টোর’-এর স্বত্বাধিকারী মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘চিনি, ছোলা ও পেঁয়াজ এই তিন পণ্যের সরবরাহ আগের তুলনায় কিছুটা বেড়েছে। তাই দামও কমতে শুরু করেছে। বাকি জিনিসের দাম ও সরবরাহ আগের মতোই রয়েছে। শুধু ভোজ্যতেলের বাজারে সরবরাহসংকট আরও বেড়েছে। বাড়তি দাম দিয়েও আমরা তেল কিনতে পারছি না।’

সেগুনবাগিচা বাজারে গতকাল দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১২০ টাকা কেজি দামে। এক সপ্তাহ আগেও তা ১৩০ টাকা ছিল। আমদানি করা পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে ১১০ টাকা কেজিতে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)-র হিসাবে গতকাল বাজারে চিনি বিক্রি হয়েছে ১২৫-১২৭ টাকা কেজি, ছোলা ১২৫-১৪০ টাকা ও দেশি পেঁয়াজ ১১৫-১৩০ টাকা কেজি। টিসিবির হিসাবে চিনি ও পেঁয়াজের দাম গত বছরের তুলনায় ১০-১৩ শতাংশ কম থাকলেও ছোলার দাম ৫১ শতাংশ বেশি।

তেলের সরবরাহ প্রায় বন্ধ

এদিকে সরকার শুল্ক-করে ছাড় দিয়ে ভোজ্যতেলের আমদানি খরচ ১০-১১ টাকা কমিয়ে আনলেও দাম না কমিয়ে সরবরাহই প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে ব্র্যান্ড কোম্পানিগুলো। ডিলার ও খুচরা বিক্রেতাদের অভিযোগ, চাহিদার ১০ শতাংশ তেলও তাঁরা পাচ্ছেন না। এমনকি অগ্রিম টাকা দিয়েও না। তাঁদের অভিযোগ, কোম্পানিগুলো দাম বাড়াতে চাইলে এভাবে সরবরাহ কমিয়ে সরকারকে চাপে ফেলে। অতীতে অনেকবার এ রকম করেছে তারা।

শান্তিনগর বাজারের সিটি গ্রুপের ডিলার মো. জিয়াউল বলেন, ‘কোম্পানি তেলের সরবরাহ প্রায় বন্ধই করে দিয়েছে। শান্তিনগর ও সেগুনবাগিচা বাজারে আমার প্রতিদিন দুই লিটারের তেলের ২০০ কার্টনের চাহিদা রয়েছে। ১ তারিখে কোম্পানি আমাকে কিছু তেল সরবরাহ দিয়েছিল। আজ বৃহস্পতিবার পাঁচ দিন পর দুই লিটারের ৫০ কার্টন তেল দিয়েছে। যদি পাঁচ দিনে এক হাজার কার্টন চাহিদার বিপরীতে ৫০ কার্টন দেয়, তবে তা চাহিদার মাত্র ৫ শতাংশ হয়।

সবজির দাম একটু কমেছে

এদিকে আলু ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম কিছুটা কমেছে। সরবরাহ বাড়ায় বিশেষ করে শীতকালীন সবজি হিসেবে পরিচিত ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ, মুলা, কাঁচা টমেটোর দাম কেজিতে ৫-১০ টাকা কমেছে। সেগুনবাগিচা বাজারের সবজি বিক্রেতা নূর-ই-আলম বলেন, ‘আলুর দাম আগের মতোই ৭৫-৮০ টাকা আছে। তবে চলতি সপ্তাহে ফুলকপি ও বাঁধাকপির সরবরাহ অনেক বেড়েছে। পিস হিসেবে দাম খুব বেশি না কমলেও গত সপ্তাহের কাছাকাছি দামেই আকারে তুলনামূলকভাবে বড় কপি কেনা যাচ্ছে।’ এই বাজারে ফুলকপি ও বাঁধাকপি পাওয়া যাচ্ছে ৪০-৫০ টাকায়। গত সপ্তাহে দাম ছিল ৫০-৬০ টাকা।