মনজুরুল ইসলাম ঢাকা
আকাশপথে দেশি-বিদেশি এয়ারলাইনসে যাত্রী এবং পণ্য পরিবহনের ভাড়া ডলারের পরিবর্তে টাকায় নির্ধারণে নির্দেশনা রয়েছে সরকারের। কিন্তু নানা অজুহাতে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করছে না দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। উল্টো ডলারের সরকার-নির্ধারিত বিনিময় হারের চেয়ে বেশি টাকা নিচ্ছে সংস্থাটি। টাকার পরিবর্তে ডলারে ভাড়া নির্ধারণ করায় ক্রমেই আকাশপথে টিকিটের দাম বাড়ছে। এতে ভাড়া পরিশোধে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে টাকায় ভাড়ার নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফা)।
বাংলাদেশ থেকে পণ্য (কার্গো) ও যাত্রী পরিবহন ভাড়া দেশীয় মুদ্রায় নির্ধারণে গত ২১ অক্টোবর বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বরাবর চিঠি দিয়েছে বাফা। চিঠিতে ডলারের বিনিময় হারে বৈষম্যের কথা তুলে ধরা হয়। এ ছাড়া দ্রুত সময়ের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের কাছে এই সমস্যার সমাধানের দাবি জানানো হয়।
বাফা জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে আকাশ ও সমুদ্রপথে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন ভাড়া ডলারে নির্ধারিত হয়। এটা বিশ্বব্যাপী প্রচলিত রীতির ব্যত্যয়। কারণ, পৃথিবীর অন্যান্য দেশে, এমনকি বাংলাদেশের প্রতিবেশী সার্ক সদস্যদেশগুলোতেও আন্তর্জাতিক পরিবহন ভাড়া স্থানীয় মুদ্রায় উল্লেখ করা হয়।
একসময় বাংলাদেশে টাকায় পরিবহন ভাড়া নির্ধারণ এবং উল্লেখ করা হতো জানিয়ে বাফা বলেছে, অজানা কারণে মার্কিন ডলারে পরিবহন ভাড়ার উল্লেখ শুরু হলে ডলারের সঙ্গে টাকার বিনিময় হার নির্ধারণের বিষয়টি চলে আসে। তাই চলতি বিনিময় হার নির্ধারণের সমস্যা নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০০৮ সালে এক নির্দেশনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসকে ডলারে প্রকাশিত পরিবহন ভাড়ার বিনিময় হার টাকায় নির্ধারণের দায়িত্ব দেয়। অথচ পৃথিবীর কোনো দেশে রাষ্ট্রীয় বিমান সংস্থা বিদেশি মুদ্রার বিনিময় হার নির্ধারণ করার উদাহরণ বিরল।
করোনা-পরবর্তী সময়ে দেশে ক্রমেই ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য কমতে থাকে। এতে আকাশপথে ভাড়া পরিশোধে যাত্রী এবং ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হতে থাকে। আকাশপথের ভাড়া পরিশোধে যাত্রী ও ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় কমাতে ২০২৩ সালের ১৬ এপ্রিল দেশীয় মুদ্রায় যাত্রী ও পরিবহন ভাড়া নির্ধারণের নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। একইভাবে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষও (বেবিচক) গত বছরের ২৮ মে একই নির্দেশনা প্রদান করে। মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন এবং বেবিচকের নির্দেশনা দুটোই গত বছরের ১ জুলাই থেকে কার্যকর করার কথা ছিল। কিন্তু বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস ওই নির্দেশনা কার্যকর করার তারিখ পাঁচবার পরিবর্তন করেছে। সবশেষে আগামী বছরের ১৬ জানুয়ারি থেকে তা বাস্তবায়নের দিন নির্ধারণ করেছে। এই তারিখটাও পরিবর্তন হওয়ার আশঙ্কা করছেন বাফাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
এ বিষয়ে বাফার সহসভাপতি ও টাওয়ার ফ্রেইট লজিস্টিকস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল আমিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পণ্য (কার্গো) ও যাত্রী পরিবহন ভাড়া দেশীয় মুদ্রায় অর্থাৎ টাকায় নির্ধারণের সিদ্ধান্ত কার্যকরে বিমান বারবার পুনর্নির্ধারণ করছে। এতে বাফাসহ সংশ্লিষ্টরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাই বিষয়টি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করছি। মন্ত্রণালয় ও বেবিচকের নির্দেশনা বাস্তবায়নের আগপর্যন্ত বিমান যাতে তাদের নির্ধারিত বিনিময় হার ব্যাংকের বিনিময় হারের সঙ্গে মিল রেখে ঘোষণা করে, সেই দাবি জানাই।’