হোম > অর্থনীতি > বিশ্ববাণিজ্য

একের পর এক দুর্ঘটনায় দিশেহারা বোয়িংকে ছাড়িয়ে গেল এয়ারবাস

অনলাইন ডেস্ক

আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৮: ০৬
এয়ারবাসের তুলনায় বোয়িংয়ের উৎপাদন অর্ধেকেরও কম হয়েছে। ছবি: এপিক ফ্লাইট একাডেমি

বোয়িংয়ের দুর্দিনের অন্ত মিলছে না। একের পর এক উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা অন্ধকারে ঢেকে দিচ্ছে বোয়িংয়ের ভবিষ্যৎ। গত বছরের জুলাইয়ে কেলি অর্টবার্গ দায়িত্ব নিয়ে বোয়িং পুনর্গঠনের পরিকল্পনা করছিলেন। কিন্তু বছরের শেষে দক্ষিণ কোরিয়ায় ঘটে যাওয়া বড় উড়োজাহাজ দুর্ঘটনা তাঁর পরিকল্পনা ভেস্তে দেয়। তার আগে বছরের শুরুতে মাঝ আকাশে বোয়িংয়ের একটি উড়োজাহাজের দরজার প্যানেল খুলে যাওয়ার ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় হয়। বোয়িংয়ের ত্রুটিপূর্ণ উড়োজাহাজ নিয়ে আলোচনা ছিল বছরজুড়েই।

১৯১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত বোয়িংয়ের আকাশে কালো মেঘ জমতে থাকে মূলত ২০১৮ সাল থেকে। সে বছর রেকর্ড ৮০৬ উড়োজাহাজ সরবরাহ করেছিল এই মার্কিন কোম্পানি। সে বছরই ৭৩৭ ম্যাক্স সিরিজের উড়োজাহাজে দুটি মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা থেকে উড্ডয়নের পর মাত্র ১৩ মিনিটে লায়ন এয়ারের ফ্লাইট ৬১০ সমুদ্রে বিধ্বস্ত হয়, সলিলসমাধি হয় ৮৯ জনের। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সালে ইথিওপিয়ান এয়ারলাইনসের ফ্লাইট ৩০২ ইথিওপিয়া থেকে কেনিয়ার রাজধানী নাইরোবি যাওয়ার পথে উড্ডয়নের ৬ মিনিট পর বিধ্বস্ত হয়। এতে ১৫৭ জন নিহত হন।

ওই দুটি দুর্ঘটনার পর বিশ্বব্যাপী বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স সিরিজের সব উড়োজাহাজ গ্রাউন্ডেড করা হয়। বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে বোয়িং। এরপর কোভিড মহামারির কারণে কয়েক মাসের জন্য আন্তর্জাতিক ভ্রমণ প্রায় বন্ধ ছিল, যার ফলে বোয়িংয়ের আয় কমতে থাকে।

২০২৩ সালে এসে এয়ারলাইনগুলোর কাছে বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ বিক্রি একলাফে ৭৭৪টি থেকে ৫২৮টিতে নেমে আসে। ২০২৪ সালে সেটা আরও নিম্নমুখী হয়। সদ্য বিদায়ী বছরে বোয়িং ৩৪০টি উড়োজাহাজ বিক্রি করেছে বলে ফ্লাইট প্ল্যানের পূর্বাভাসের বরাতে জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।

২০২৩ সালে এসে এয়ারলাইনগুলোর কাছে বোয়িংয়ের উড়োজাহাজ বিক্রি একলাফে ৭৭৪টি থেকে ৫২৮টিতে নেমে আসে। ২০২৪ সালে সেটা আরও নিম্নমুখী হয়। সদ্য বিদায়ী বছরে বোয়িং ৩৪০টি উড়োজাহাজ বিক্রি করেছে বলে ফ্লাইট প্ল্যানের পূর্বাভাসের বরাতে জানিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে প্রতিদ্বন্দ্বী ইউরোপের শীর্ষস্থানীয় উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এয়ারবাসের তুলনায় বোয়িংয়ের উৎপাদন হয়েছে অর্ধেকেরও কম। গত বছর এয়ারবাস ৭৬৬টি উড়োজাহাজ বিক্রি করেছে, যা বোয়িংয়ের সম্ভাব্য বিক্রির দ্বিগুণ।

গত ডিসেম্বরের শেষে জেজু এয়ার উড়োজাহাজ পরিবহন সংস্থার বোয়িং ৭৩৭-৮০০ উড়োজাহাজটি দক্ষিণ কোরিয়ার মুয়ান উড়োজাহাজ বন্দরে অবতরণের সময় দুর্ঘটনার শিকার হয়। ১৮১ জন যাত্রীর মধ্যে মাত্র দুজন বেঁচে ফেরেন।

এর আগে বছরের শুরুতে মাঝ আকাশে বোয়িংয়ের একটি উড়োজাহাজের দরজার প্যানেল উড়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে। জানা যায়, মেরামতের পর চারটি বোল্ট সঠিকভাবে লাগানো হয়নি।

সে ঘটনাটি এত আলোড়ন না ফেললেও ডিসেম্বরের শেষে দক্ষিণ কোরিয়ার দুর্ঘটনাটি আবারও সব আলোচনা সামনে নিয়ে এল। এত বড় দুর্ঘটনার সঠিক কারণ এখনো জানা যায়নি। উড়োজাহাজের কোনো নকশাগত ত্রুটিকে সরাসরি দায়ী না করা হলেও বোয়িংয়ের ত্রুটিপূর্ণ উড়োজাহাজের ইতিহাস এখন পর্যন্ত সব আলোচনাকে সেদিকে প্রবাহিত হচ্ছে।

তবে বোয়িংয়ের দুর্দশার পুরো সুযোগ কাজে লাগাতে পারেনি এয়ারবাস। নিজস্ব বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি এই কোম্পানি। ২০২৪ সালে এয়ারবাসের বার্ষিক সরবরাহ লক্ষ্য ছিল ৭৭০টি। বছরের মাঝামাঝি এসে লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করা হয়। তবে তারা দাবি করে, তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ীই সরবরাহ সম্ভব হয়েছে। সম্ভাব্য ভবিষ্যতে এয়ারবাস তাদের ২০১৯ সালের রেকর্ড বার্ষিক উৎপাদন ৮৬৩ ইউনিটকে ছাড়িয়ে যাবে।

গত বৃহস্পতিবার এয়ারবাসের বাণিজ্যিক উড়োজাহাজ বিভাগের প্রধান নির্বাহী ক্রিশ্চিয়ান শেরার বলেন, কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করেও কোম্পানি (এয়ারবাস) একটি ভালো বছর পার করেছে। তিনি বলেন, ‘আমরা উৎপাদন বাড়াচ্ছি না। যতটা আমাদের গ্রাহকেরা বা আমরা চাই, তার চেয়ে বেশি উৎপাদন করা হবে না।’

তবে বোয়িং নিয়ে আশার খবর জানিয়েছে উড়োজাহাজ শিল্প প্রকাশনা এয়ার কারেন্ট। এক প্রতিবেদনে তারা জানায়, সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করে উৎপাদন কার্যক্রম বাড়ানোর চেষ্টা করছে বোয়িং। নতুন প্রধান নির্বাহী অর্টলিগ বোয়িংয়ের সর্বাধিক বিক্রীত ৭৩৭ ম্যাক্স জেটের সরবরাহ বাড়ানোর পরিকল্পনা করছেন। আগামী মে মাস থেকে প্রতি মাসে ৩৮টি ৭৩৭ ম্যাক্স উড়োজাহাজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন তিনি।

তবে উড়োজাহাজগুলোর একের পর এক বড় দুর্ঘটনার পর পরিকল্পনা অনুযায়ী উৎপাদন হার বাড়িয়ে বোয়িং মাসিক লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছাতে সক্ষম হবে কি না, এ নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন বিশ্লেষকেরা।

আর্থিক গবেষণা ও বিনিয়োগ পরামর্শদানকারী প্রতিষ্ঠান বার্নস্টিনের বিশ্লেষকেরা বলছেন, ‘মাসে ৩৮টি উড়োজাহাজ উৎপাদনের পরিকল্পনাটি বেশ উৎসাহের সঙ্গে এগিয়ে চলছে মনে হচ্ছে। তবে বোয়িং এখনো পুনরুদ্ধারের পথে হাঁটার প্রমাণ দিতে পারেনি। তারা মে মাসে সময় নির্ধারণ করে দিলেও পরবর্তীকালে বলেছে ৩৮টি উড়োজাহাজ উৎপাদনের সক্ষমতায় পৌঁছাতে জুলাই মাস গড়াবে। এ ছাড়া, নতুন ব্যবস্থাপকদের উৎপাদন বাড়ানোর অভিজ্ঞতার অভাব নিয়েও তাঁরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

গত মাসে গবেষণা এবং বিশ্লেষণমূলক প্রতিষ্ঠান ক্রেডিটসাইটসের বিশ্লেষক ম্যাট উডরুফ বলেন, বোয়িংয়ের উৎপাদন বাড়ানোর হার প্রায় ‘অবাস্তব’। কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশার চেয়ে দ্রুত উৎপাদন বাড়ানোর চেষ্টা করছে।

বিদেশিদের বাড়ি কেনার সুযোগ দিয়ে বিপাকে স্পেন, আসছে শতভাগ কর

দেশের প্রথম ‘অনলাইন বাণিজ্য মেলা’ শুরু করল রকমারি

মূল্যস্ফীতি, সুদের হার ও শুল্ক—২০২৫ সালে তিন চ্যালেঞ্জের মুখে বিশ্ব অর্থনীতি

সেকশন