মাসুদ পারভেজ রুবেল, (ডিমলা) নীলফামারী
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় সড়কের পাশে কৃষিজমিতে পুকুর খননের নামে বালু তুলে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। কয়েক দিন ধরে এক্সকাভেটর দিয়ে বালু উত্তোলন করছেন স্থানীয় এক ব্যবসায়ী। এতে ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে সড়কসহ পাশের ফসলি জমি ও বসতভিটা।
এলাকাবাসীর ভাষ্য, সড়কটি ভেঙে গেলে আশপাশের ১০ গ্রামের অন্তত ২০ হাজার মানুষকে দুর্ভোগে পড়তে হবে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে জানানোর পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো হুমকি-ধমকি শুনতে হচ্ছে বলে অভিযোগ তাঁদের।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়নের বসুনিয়া গ্রামের মূল সড়কের পাশ ঘেঁষে ফসলি জমি থেকে এক্সকাভেটর দিয়ে ২০-৩০ ফুট গভীর গর্ত করে পুকুর খননের নামে বালু তোলা হচ্ছে। পুকুরের অবস্থান একেবারে সড়ক-লাগোয়া। তার চারপাশে রয়েছে আবাদি জমি। খননের বালু সাত-আটটি ট্রাক্টরে করে নিয়ে বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। পাশের সড়ক দিয়ে মালবাহী গাড়ি, সিএনজিচালিত অটোরিকশাসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে। খননের ফলে সড়কের পাড় ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
বালু নিতে আসা ট্রাক্টরশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জমির মালিক জহির উদ্দিনের সঙ্গে চুক্তি করে বালু তুলে বিক্রি করছেন আবু বক্কর নামের এক ব্যবসায়ী। স্বপন ইসলাম, সুমনসহ বেশ কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা অভিযোগ করে বলেন, এর আগেও আবু বক্কর একই স্থান থেকে বালু তুলে বিক্রি করেছেন। পরে জমি ও সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে শুরু করলে এলাকাবাসী প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেন। এরপর বালু তোলা বন্ধ করা হয়। কিন্তু প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কয়েক দিন থেকে আবার রাতদিন এক্সকাভেটর দিয়ে বালু তোল হচ্ছে। বালু তোলার স্থানটি ইতিমধ্যে ২০ ফুট গভীর হয়েছে, আরও খনন চলছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আবু বক্কর জানান, জমির মালিক জহির উদ্দিন এই পুকুর খনন করছেন। খননের বালু দিয়ে তিনি স্কুলের জন্য জায়গা ভরাট করছেন। চুক্তি নিয়ে খননকাজ করা হচ্ছে। খনন করতে গিয়ে অনেক টাকা খরচ হয়েছে, তাই কিছু বালু বিক্রি করছেন। এতে রাস্তার যে ক্ষতি হচ্ছে, তা তিনি সংস্কার করে দেবেন বলে জানান। প্রশাসনের অনুমতি নিয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের বিষয়টি আমার এক আত্মীয় দেখছেন। আমি শুধু স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানিয়েছি।’
এ বিষয়ে জমির মালিক জহির উদ্দিন বলেন, ‘আমার কাছে মাটি চেয়েছে, তাই খনন করতে দিয়েছি। মাটি-বালু কাকে দিয়েছে, কার সঙ্গে কথা বলেছে, তা আবু বক্করকে বলেন। আমি জানি না।’ বালাপাড়া ইউপির সহকারী কর্মকর্তা (ভূমি) তহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বালু তুলতে নিষেধ করা হয়েছে; কিন্তু তারপরও তোলা হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এখন পর্যন্ত আর কোনো নির্দেশনা পাইনি।
উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফারজানা আকতার বলেন, ‘পুকুর খনন বন্ধের জন্য লোক পাঠিয়েছিলাম। এরপরও বন্ধ না হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’