মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে করা মামলায় মৌলভীবাজারের তিন আসামির বিষয়ে যেকোনো দিন রায় ঘোষণা করবেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন।
বড়লেখার ওই তিন আসামি হলেন-আবদুল আজিজ ওরফে হাবুল, মো. আবদুল মতিন ও মো. আবদুল মান্নান। এর মধ্যে আবদুল আজিজ ও মো. আবদুল মান্নান বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। আর আবদুল মতিন পলাতক। আসামিদের বিরুদ্ধে একাত্তরে মৌলভীবাজারের বড়লেখা এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগের মতো পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
২০১৪ সালের ১৬ই অক্টোবর এ তিনজনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের তদন্ত শুরু করেন তদন্ত সংস্থার সহকারী পরিচালক মো. শাহজাহান কবির। ২০১৬ সালের ১৪ নভেম্বর তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা।
আসামি আব্দুল মান্নানের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এম. সারোয়ার হোসেন এবং আব্দুল আজিজ ও পলাতক আবদুল মতিনের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ও সাবিনা ইয়াসমিন মুন্নি।
প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে মে মাসের দিকে ভারতে গিয়ে এক মাস প্রশিক্ষণ নেন দুজন। পরে ফিরে এসে মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর অত্যাচার করে। এদের বিরুদ্ধে ৭২ সালেই মামলা ছিল। মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল, স্থানীয় থানা কাউন্সিলের রাজাকারের তালিকায় তাদের নাম ছিল। ২০১০ সালে আমেরিকায় একটি বই প্রদর্শিত হয়। যা প্রকাশ করে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত একজন নাগরিক। ওই বইয়েও রাজাকার হিসেবে তাদের নাম রয়েছে।’
আইনজীবী আব্দুস সাত্তার পালোয়ান বলেন, ‘আব্দুল আজিজ ও আবদুল মতিন মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে গিয়ে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন মর্মে প্রসিকিউশন স্বীকার করে নিয়েছেন। তবে প্রশিক্ষণ শেষে পরবর্তীতে তারা রাজাকারে যোগ দিয়েছেন মর্মে প্রসিকিউশনের অভিযোগ। কিন্তু এই মর্মে কোনো দলিল দিতে পারেনি তারা। আর ২০১৫ সালে ইউএনও কর্তৃক একটি তালিকা তৈরি করে নিয়ে এসে বলছে তারা রাজাকার ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সাব সেক্টর কমান্ডার ১৯৭১ সালের ১৪ অক্টোবর সার্টিফিকেট দিয়েছেন আ. আজিজ মুক্তিযোদ্ধাদের গোয়েন্দা হিসেবে দেশে আসা–যাওয়া করতে পারবেন এবং হেডকোয়ার্টারে যেতে পারবেন। ওই সময়ও তিনি মুক্তিযোদ্ধা হলে পালিয়ে আসলেন কবে?’
আব্দুস সাত্তার পালোয়ান আরও বলেন, মঈনকে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আখ্যা দিয়েছেন স্থানীয় ১৬ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তারা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদে অভিযোগও দিয়েছেন। সেই মঈনই একজন নারীকে দিয়ে ধর্ষণের ঘটনা সাজিয়ে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করিয়েছে। মূলত ওই মঈনের সঙ্গে আসামিদের বিরোধ ছিল বলে দাবি এই আইনজীবীর। যদিও মঈন এরই মধ্যে মারা গিয়েছেন বলে জানান তিনি।