সহিবুর রহমান, হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জে ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। বিভিন্ন উপজেলায় মাঠের উর্বর মাটি কেটে ইটভাটায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কৃষকেরা সাময়িক লাভের জন্য লোভে পড়ে যেমন মাটি বিক্রি করছেন, আবার ভয়ভীতি দেখিয়েও তাঁদের জমির মাটি সাবাড় করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনের অভিযান ও দণ্ডেও মাটি কাটা থামানো যাচ্ছে না।
জেলার মধ্যে সদর, মাধবপুর, চুনারুঘাট ও বাহুবলে দেদার মাটি কাটা হচ্ছে। এসব এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বেশির ভাগ মাটি যাচ্ছে ইটভাটাগুলোতে। সম্প্রতি মাধবপুর উপজেলা প্রশাসনের অভিযানে অন্তত দুজনকে কারাদণ্ড ও দুই লাখ টাকা জরিমানা করার পরও থেমে নেই ফসলি জমির মাটি কাটা। এতে করে উর্বরতা হারিয়ে ক্রমেই নিষ্ফলা হয়ে পড়ছে এখানকার কৃষিজমি। অন্যদিকে বাড়ছে ভূমিক্ষয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কিছু রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধির ছত্রচ্ছায়ায় কতিপয় ব্যবসায়ী প্রতিবছরের ডিসেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত মাটির ব্যবসা করেন। তাঁরা কৃষকদের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে জমির এক থেকে দেড় ফুট কিনে চড়া দামে ইটভাটায় বিক্রি করেন। আর্থিকভাবে সাময়িক লাভবান হওয়ার আশায় অনেক কৃষক তাঁদের জমির মাটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে ফসল উৎপাদন কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।
সদর উপজেলার বৈদ্যের বাজারের আলফু মিয়া বলেন, ‘আমাদের এলাকায় ২০-২৫টি ইটভাটা রয়েছে। ভাটামালিকেরা প্রলোভন দিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে ফসলি জমির মাটি কিনে নিচ্ছেন। মাটি বেচতে রাজি না হলে ভয়ভীতি দেখানো হয়।’
মাধবপুর উপজেলার জগদীশপুরের জমশেদ মিয়া বলেন, এলাকায় বেশ কয়েকটি ইটভাটা রয়েছে। এ ছাড়া আছে কয়েকটি কোম্পানি। একটি চক্র ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে তাঁদের কাছে বিক্রি করছে। ফলে জমি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
কেটে নেওয়া এই মাটি ট্রাক্টরে করে ইটভাটায় নেওয়া হয়। মাটিবোঝাই ভারী ট্রাক্টরের চাপে এলাকার গ্রামীণ সড়কের বিভিন্ন অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভাঙা সড়কের কারণে বাড়ছে ধুলাবালু আর মানুষের শ্বাসকষ্টজনিত রোগের সমস্যা। এ ছাড়া খোয়াই নদের চর কেটে মাটি উত্তোলন করছে একটি চক্র।
এ নিয়ে কথা হলে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জুল সোহেল জানান, জেলার পরিবেশের অবস্থা খুবই খারাপ। শতাধিক কলকারখানার বর্জ্যে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। অন্যদিকে চলছে ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার মহোৎসব।ফলে একসময় জমিতে আবাদ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। প্রশাসনের উচিত মাটিখেকোদের লাগাম টেনে ধরা।
যোগাযোগ করা হলে হবিগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নূরে আলম সিদ্দিকী জানান, কৃষি কর্মকর্তারা আবাদি জমি থেকে মাটি বিক্রি করতে কৃষিদের বারবার নিষেধ করেছেন। তারপরও কৃষকেরা লোভে পড়ে মাটি বিক্রি করছেন। এতে দিন দিন আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে।