ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থায় ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থায়ী চাকরি করতে পারবেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরিরত অবস্থায় কেউ নিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চাইলে সে ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে। কিন্তু এই নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে চাকরি, পড়াশোনা, পদোন্নতি—সবই হয়েছে মুহাম্মদ আহসানুল কবিরের। বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার (প্রশাসন-৩) পদে কর্মরত এই কর্মকর্তা ডেপুটি রেজিস্ট্রার হিসেবে আরেকটি পদোন্নতি পেতে সম্প্রতি রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদনও করেছেন।
আহসানুল কবিরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার সার্বিক বিষয় উল্লেখ করে উপাচার্যের দপ্তরে একটি নোট পাঠিয়েছেন। সেই নোটের অনুলিপি থেকে জানা যায়, আহসানুল কবির ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে ব্যাংকিং ও ফিন্যান্স বিভাগে ভর্তি হন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত থাকার বিষয়টি গোপন রেখে ২০০৪ সালের এপ্রিল মাসের ১০ তারিখে তিনি নিম্নমান সহকারী পদে যোগদান করেন। অস্থায়ী এই পদে যোগ দিতে ১৯৯৮ সালে এইচএসসি পাসের সনদ দেখিয়েছিলেন তিনি। এই পদে ১ বছর ৩ মাস চাকরি করেন তিনি। চাকরিরত অবস্থায় বিবিএ ফাইনাল পরীক্ষায় অংশ নেন এবং পরবর্তীতে এমবিএ (মাস্টার্স) কোর্সে ভর্তি হন আহসানুল কবির। এমবিএতে অধ্যয়নরত থাকার তথ্য গোপন করে বিবিএ পাসের সার্টিফিকেট দিয়ে ২০০৫ সালের ডিসেম্বর ৩১ তারিখে উচ্চমান সহকারী পদে (স্থায়ী চাকরি) যোগদান করেন তিনি।
শুধু তা-ই নয়, স্থায়ী পদে চাকরি করলেও কর্তৃপক্ষকে না জানিয়ে এমবিএ পরীক্ষায় অংশ নেন আহসানুল কবির। পরবর্তী সময়ে এমবিএ সনদ গোপনে ব্যক্তিগত নথিতে সংরক্ষণ করে পয়েন্টের সুবিধা নিয়ে ২০১০ সালে ডিসেম্বরের ৩০ তারিখে প্রধান সহকারী, ২০১৪ সালের মে মাসের ২৫ তারিখে সেকশন অফিসার ও ২০১৮ সালে সেকশন অফিসার থেকে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী রেজিস্ট্রার হন। বর্তমানে ডেপুটি রেজিস্ট্রারে পদোন্নতি পাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন এই কর্মকর্তা।
তথ্য গোপন কেন জানতে চাইলে আহসানুল কবির বলেন, ‘বিভ্রান্তিকর ও অসত্য তথ্য দিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে। আমি নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে সকল পদোন্নতি পেয়েছি।’
রেজিস্ট্রার প্রবীর কুমার সরকার বলেন, ‘বিষয়টি উপাচার্য স্যার দেখবেন, আমি নোট পাঠিয়ে দিয়েছি।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘ইতিমধ্যে তাকে তিনবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রমোশন দিয়েছে। এখন আর দেব না—এটা বললে তো মৌলিক অধিকারের জায়গায় আঘাত হানা হবে। বিষয়টি নজরে রাখছি।’