পীরগঞ্জে করতোয়া নদী থেকে বালু তোলার ঘটনায় জড়িত ভূমি অফিসের কর্মচারী আরিফুল ইসলাম আরিফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে বালু না তোলার মুচলেকা দেওয়ার পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এখন তিনি দিনের পরিবর্তে রাতে বালু উত্তোলন করছেন। তাঁর মতো দেদার বালু উত্তোলন করছেন অন্য প্রভাবশালীরাও।
করতোয়া নদীতে প্রায় অর্ধশত স্থানে বোমা এবং শ্যালো মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন চলছে। স্থানীয় প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও কাজ হচ্ছে না। উপজেলার টুকুরিয়া ইউনিয়নে সবচেয়ে বেশি বালু উত্তোলন চলছে। ফলে রাস্তাঘাট, ফসলি জমি ও বাড়িঘর ভাঙছে। কেউ প্রতিবাদ করলে লুটেরার দল হামলা-মামলার হুমকি দিচ্ছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, পীরগঞ্জে সরকারিভাবে বালুমহাল না থাকলেও করতোয়া নদীর তলদেশ, চর এবং নদীসংলগ্ন অন্যের জমি থেকে প্রভাবশালীরা বালু উত্তোলন করছেন। যাঁরা বালু তুলছেন তাঁদের এক শতাংশ জমিও নেই নদীসংলগ্ন এলাকায়। শুধু ক্ষমতার জোরে বালু তুলছেন তাঁরা। নদীসংলগ্ন এলাকায় কোটি টাকা মূল্যের হাজার হাজার ট্রাক বালু মজুত করছেন।
এতে অনেক কৃষকের জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। পাশাপাশি উপজেলার পশ্চিমাঞ্চলের যে কয়টি সড়কের ওপর দিয়ে বালু পরিবহন করা হচ্ছে, সে এলাকার সড়কগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। সম্প্রতি পীরগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিরোদা রানী রায় অভিযান চালিয়ে কয়েকটি শ্যালো মেশিন বিনষ্ট ও মামলা করলেও বালু লুট বন্ধ হচ্ছে না।
প্রায় তিন বছর ধরে মোনাইল দুর্গাপুরে করতোয়া নদী থেকে পীরগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মচারী আরিফুল ইসলাম বালু উত্তোলন করছেন। তিনি উপজেলার জাফরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। নদীর বালু পরিবহন করতে আরিফ তিনটি ট্রাক কিনেছেন বলে জানা গেছে। তাঁর মতো ওই স্থানে বছরের পর বছর ধরে বিছানা গ্রামের আনোয়ার হোসেন, মাহে আলম, শাহিনুর রহমান, সাইদুল ইসলাম ও ইটভাটার মালিক আশরাফুল ইসলামও বালু উত্তোলন করছেন।
ইটভাটা ব্যবসায়ী আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘আমার বালু তোলা বন্ধ আছে। তবে অনেকেই বালু তুলছে।’ অভিযুক্ত মিঠিপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের কর্মচারী আরিফুল ইসলাম আরিফ বলেন, ‘আমি আর বালু তুলব না বলে ইউএনও স্যারের কাছে মুচলেকা দিয়েছি। তবে আমার তিনটি ট্রাক ভাড়ায় বালু পরিবহন করছে।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভুক্তভোগীরা জানান, আরিফ প্রভাবশালী হওয়ায় তার বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলে না। বালু তোলার কারণে টুকুরিয়া ইউনিয়নের মোনাইল দুর্গাপুরে প্রায় এক কিলোমিটার পাকা রাস্তা পুরোটা ভেঙে গেছে। বালু উত্তোলন বন্ধ ও রাস্তা-জমি রক্ষায় একাধিকবার মানববন্ধন করা হয়েছে। কোনো কিছুতেই কাজ হচ্ছে না।
এ বিষয়ে ইউএনও বিরোদা রানী রায় বলেন, বালু উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে ইউনিয়ন সহকারী তহশিলদার নুর আলম বাদী হয়ে মামলা করেছেন। বাকিদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।