মাদারীপুর প্রতিনিধি
মাদারীপুরে কাস্টমস ভ্যাট-এর দুই কর্মকর্তার ঘুষের টাকা লেনদেনের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। গত বুধবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে মুহূর্তেই ওই ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, দুই রাজস্ব কর্মকর্তা এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে টাকা নেওয়ার (ঘুষ) ব্যাপারে কথা বলছেন। সেই সঙ্গে প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে অফিস খরচের জন্য ১ হাজার করে টাকা দেওয়ার কথা বলছেন এক কর্মকর্তা। ভিডিওতে আরও দেখা গেছে, কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ মাদারীপুরের বিভাগীয় কর্মকর্তার কার্যালয়ের রাজস্ব কর্মকর্তা (সার্কেল-২) রফিকুল ইসলাম ও (সার্কেল-১) মো. ইমরান কবীর অফিস কক্ষে বসে ঘুষের টাকা নিচ্ছেন।
ফাঁস হওয়া ভিডিওর শুরুতে একজন ব্যবসায়ীর বিষয় ধরে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এইডা কী আনছেন? এই বলে ৫০০ টাকার কয়েকটি নোট হাতে গুনে পকেটে রাখেন রফিকুল। এরপর তিনি বলেন, কী যে করেন আপনারা? বিদেশি রেমিট্যান্সে মাদারীপুর জেলা ধনীর দিক থেকে তৃতীয়তে আছে। আপনারা কেন এমন করেন?’
রফিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘আপনারা স্যারকে (ইমরান কবীর) বলে যান, দেখা করে যান। কারণ তিনি আপনার অরজিনাল স্যার। সেই আপনাকে বাঁচাতে পারবে, মারতে পারবে। বুঝছেন! শেষ কথায় রফিকুল ইসলাম ওই ব্যবসায়ীকে বলেন প্রতি মাসে অফিস খরচ ১ হাজার টাকা দিয়ে যাবেন। এটা যেন আর না বলা লাগে। মাসের ১০ তারিখের মধ্যে টাকা আমার কাছে দিয়ে যাবেন।’
ভিডিওটির ৮ মিনিট ৩৫ সেকেন্ড পরে দেখা যায় রাজস্ব কর্মকর্তা (সার্কেল-১) মো. ইমরান কবীরকে। তিনি ওই ব্যবসায়ীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার দোকানের আশেপাশে যারা দিচ্ছে ওয়েল অ্যান্ড গুড। আর যারা দিচ্ছে না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আপনার নম্বর দিয়ে যান।’ পরে ওই ব্যবসায়ী এক হাজার টাকা ইমরান কবীরের টেবিলে রাখলে তিনি টাকা নেন।
মাদারীপুর পুরান বাজারের পোশাক ব্যবসায়ী অমিত হাসান বলেন, ‘আমার ছোট পোশাকের দোকান। প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে ভ্যাট দিতে বলেন স্যারেরা। পরে অফিসে গেলে তাঁরা এক হাজার টাকা করে ভ্যাট দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। সেই সঙ্গে প্রতি মাসের ১০ তারিখের মধ্যে তাদের অফিস খরচের জন্যও আরও টাকা দিতে হবে।’
ভিডিও সম্পর্কে রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইমরান কবীর বলেন, ‘ভিডিওটি আমাদের না, এটি সাজানো।’ রাজস্ব কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ওই ব্যবসায়ী আমার কাছে আসার পর তাঁকে ট্রেজারি চালানের মাধ্যমে টাকা জমা দিতে বলেছিলাম। তাঁর কাছে কোনো অনৈতিক দাবি করা হয়নি।’
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, ‘দুই রাজস্ব কর্মকর্তার ঘুষ গ্রহণের ভিডিওটি আমি দেখেছি। পুরো ঘটনাটি যাচাই-বাছাই করা হবে। সত্যতা পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’