ঢাকার ব্যস্ত এক দুপুর, যানজটে আটকে আছে মানুষ। খিলগাঁওয়ের ‘আপন কফি শপে’র সামনে দাঁড়িয়ে একটা ছোট্ট মেয়ে। বয়স বড়জোর ৯ কিংবা ১০। খালি পায়ে, গায়ে ধুলা, চোখে কৌতূহল— হয়তো কিছুটা ক্ষুধার্তও।
দূর থেকে কেউ একজন ভিডিও করছিলেন। ক্যামেরার লেন্সে ধরা পড়ল অমানবিক দৃশ্য— মেয়েটিকে ধমকানো হয়, এরপর ঘাড় ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়। যেন সে মানুষ নয়, পথের ধুলো। এক কর্মচারী হঠাৎ মোটা লাঠি নিয়ে আঘাত করে তাঁর ছোট্ট পায়ে। শিশুটি কাতরাতে কাতরাতে পাশের দুটি গাড়ির ফাঁকে আশ্রয় নেয়। কিন্তু নির্যাতন থামে না, সেই লাঠি আবার তাকে ধাওয়া করে।
ব্যথায় কাঁপতে কাঁপতে ভীত সন্ত্রস্ত মেয়েটি ছুটে যায় এক মোটরসাইকেলচালকের দিকে। তার চোখে হয়তো তখন একটুখানি ভরসা জ্বলে উঠেছিল। চালক শিশুর কথা শুনে কফিশপের ভেতরে যান, কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলেন।
এই পুরো ঘটনা রোববার বিকেলে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। মুহূর্তেই নিন্দার ঝড় ওঠে। বিষয়টি নজরে আসার পর রামপুরা থানার পুলিশ অভিযানে গিয়ে কফি শপটির মালিক, ম্যানেজার ও লাঠি দিয়ে শিশুটিকে মারধর করা কর্মচারী শুভসহ চারজনকে হেফাজতে নিয়েছে।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের খিলগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. ফয়েজ ইকবাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শিশুটিকে নির্যাতনের বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। সঙ্গে সঙ্গে আমরা অভিযুক্তদের আটক করেছি। তবে এখনো শিশুটিকে পাওয়া যায়নি। আমরা ধারণা করছি, সে আশপাশের কোনো এলাকায় থাকে। তার ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে খোঁজা হচ্ছে।’
পুলিশ বলছে, নির্যাতনের শিকার শিশুটি হয়তো প্রতিদিন খাবারের আশায় কফিশপের সামনে আসে। কেউ দিলে খায়, কেউ না দিলে চুপচাপ চলে যায়। সেদিনই শুধু ফিরে যাওয়ার সুযোগও পায়নি।
এই শহরের হাজারো মুখের ভিড়ে এক শিশু হারিয়ে যায়, আর আমাদের সবার বিবেক একবার কেঁপে ওঠে—আমরা কি সত্যিই মানুষ হয়ে উঠতে পেরেছি?