হোম > শিক্ষা

তিন শূন্যের পৃথিবী

মুসাররাত আবির 

নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ফাইল ছবি

কেমন হতো, যদি পৃথিবীজুড়ে না থাকত কোনো দারিদ্র্য, বেকারত্ব কিংবা কার্বন নিঃসরণ? পুরো ব্যাপারটিকে বলা হয় ‘থ্রি জিরো’ তত্ত্ব। আর এই তত্ত্বের প্রবর্তক হলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আর্থিক স্বাধীনতা, কর্মঠ জনশক্তি তৈরি এবং পরিবেশ উন্নয়নে বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে জনপ্রিয় ও কার্যকর একটি মডেল।

এই তত্ত্বের মাধ্যমে ড. ইউনূস একটি সমতাভিত্তিক ও স্থিতিশীল পৃথিবীর ধারণা তুলে ধরেছেন, যেখানে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং পরিবেশগত সুরক্ষা একসঙ্গে চলবে। এই ‘থ্রি জিরো’ মডেলের ওপর ভিত্তি করে তিনি লিখেছেন ‘আ ওয়ার্ল্ড অব থ্রি জিরোস’ বইটি। এই বইয়ে তিনি তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ—দারিদ্র্য, বেকারত্ব এবং পরিবেশগত অবক্ষয় সমাধানের জন্য একটি দূরদর্শী অর্থনৈতিক মডেল প্রস্তাব করেছেন।

এখানে তিনি প্রচলিত পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সমালোচনা করেছেন, যা অসমতা, বেকারত্ব এবং পরিবেশের ক্ষতি বাড়ায়। তিনি দেখিয়েছেন, প্রচলিত পুঁজিবাদী ব্যবস্থা কীভাবে অর্থনৈতিক বৈষম্য ও পরিবেশ ধ্বংসের কারণ হয় এবং কীভাবে এর একটি বিকল্প মডেল দাঁড় করানো যায়।

থ্রি জিরো ফ্রেমওয়ার্ক

শূন্য দারিদ্র্য: দারিদ্র্য কেবল অর্থের অভাবে নয়, এটি সুযোগ, ক্ষমতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের অভাবেও হয়ে থাকে। বইটিতে ড. ইউনূস দেখিয়েছেন, কীভাবে প্রচলিত পুঁজিবাদী ব্যবস্থা সম্পদের বৈষম্য বাড়ায়।

তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে দেখিয়েছেন, মাইক্রোক্রেডিট বা ক্ষুদ্রঋণ কীভাবে সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের উদ্যোক্তা হতে সাহায্য করেছে। উদাহরণস্বরূপ, একজন দরিদ্র নারী; যিনি আগে নিজের ও পরিবারের জন্য খাবার জোগাড়ে হিমশিম খেতেন। একটি ক্ষুদ্রঋণের মাধ্যমে নিজস্ব ব্যবসা শুরু করে আর্থিকভাবে স্বাধীন হয়ে উঠতে পারেন।

এটি শুধু অর্থনৈতিকভাবে নয়, মনস্তাত্ত্বিকভাবেও তাদের জীবন বদলে দিয়েছে। কারণ, তারা নিজেদের জীবনের নিয়ন্ত্রণ নিতে শিখেছে। একই সঙ্গে নারীর ক্ষমতায়নেও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শূন্য বেকারত্ব: তিনি প্রচলিত ধারণা; যেমন ‘চাকরি করা ছাড়া অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হওয়া সম্ভব নয়’-কে চ্যালেঞ্জ করেছেন। তিনি এই বইয়ে উদ্যোক্তাবৃত্তিকে বিকল্প হিসেবে তুলে ধরেছেন, বিশেষ করে এমন ব্যবসা করতে উদ্বুদ্ধ করেছেন; যা সমাজের প্রয়োজন মেটানোর পাশাপাশি অন্যদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করে।

কারণ, তাঁর মতে কোনো মানুষের একক কারণে সমাজে দারিদ্র্যের সৃষ্টি হয় না। আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামোর ভেতরেই তা তৈরি হয়। তাই কারও অধীনে চাকরি না করে উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করার পেছনে জোর দিতে হবে। ড. ইউনূস বিশ্বাস করেন, প্রত্যেক মানুষই জন্মগতভাবে একজন উদ্যোক্তা এবং সবার মধ্যে অনেক সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে।

শূন্য নেট কার্বন নিঃসরণ: জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ ধ্বংসের বিরুদ্ধে লড়াই বইটির একটি বড় অংশ। ড. ইউনূস দেখিয়েছেন, নবায়নযোগ্য শক্তি ব্যবহার, পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি এবং দায়িত্বশীল উৎপাদনব্যবস্থা কীভাবে পৃথিবীকে বাঁচাতে পারে। তিনি একটি গ্রিন ইকোনমি তৈরি করার প্রয়োজনীয়তা এবং ব্যবসার টেকসই চর্চার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।

ড. ইউনূস এই বইয়ের মাধ্যমে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা তুলে ধরেছেন। তিনি দেখিয়েছেন, প্রচলিত পুঁজিবাদ লাভকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দেয় এবং এটি প্রায়ই সমাজের বৃহত্তর অংশকে উপেক্ষা করে।

তাঁর প্রস্তাবিত ‘নতুন অর্থনীতি’ মানুষের কল্যাণ এবং পরিবেশ রক্ষার ওপর জোর দেয়। যাঁরা টেকসই উন্নয়ন, সামাজিক দায়িত্ব এবং একটি মানবিক অর্থনীতি গড়ার বিষয়ে আগ্রহী, তাঁদের জন্য বইটি অনুপ্রেরণার এক উৎস। এটি এমন ভবিষ্যৎ দেখায়, যা আমরা সবাই মিলে গড়ে তুলতে পারি।

ডাকসু নির্বাচনের রূপরেখা ঘোষণার দাবিতে স্মারকলিপি, কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি

তেজগাঁও কলেজের সমাজকর্ম বিভাগ অ্যালামনাই পুনর্মিলনী

বিশ্ববিদ্যালয়জীবন থেকেই হতে পারে গবেষণার হাতেখড়ি

ক্যাম্পাসে যেভাবে কাটল ঈদের দিন

প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের পিএইচডি ফেলোশিপ ২০২৫-২৬

দুই যুগে পদার্পণ হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের

বিদেশে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট স্বপ্নপূরণের সেরা ১০ বিশ্ববিদ্যালয়

ঈদে অবলা প্রাণীদের বন্ধু মিশকাত

দুই ভিসির ‘অনিয়মের পথে’ নতুন ভিসি

বিবিএ গ্র্যাজুয়েটদের জন্য বিদেশে স্নাতকোত্তর, কোন কোর্স কোথায় পড়বেন