ঈদুল ফিতর মুসলিম বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব, যা ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যের মধ্য দিয়ে উদ্যাপিত হয়। শৈশব থেকে কৈশোর, যৌবন থেকে প্রৌঢ়ত্ব, এমনকি বৃদ্ধ বয়সেও ঈদ নিয়ে মানুষের অনুভূতি একেক রকম। শৈশবের ঈদ মানেই বাবার হাত ধরে ঈদগাহে যাওয়া, নতুন জামা আর সালামির আনন্দ। বিশ্ববিদ্যালয়জীবনে ঈদ মানে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, সালামি আদান-প্রদান আর ক্যাম্পাসজীবনের স্মৃতিগুলো রঙিন করা। ঈদের আগের রাত থেকে উৎসবের আমেজ শুরু হয়—নতুন পোশাক, হাতে মেহেদি, ঈদের নামাজের প্রস্তুতি আর ঈদের দিন সকালের মিষ্টিমুখ। কয়েকজন পাঠকবন্ধুর ঈদ ভাবনা তুলে ধরা হলো।
ঈদ আনন্দে রঙিন হোক সবার জীবন
ঈদ মানেই আনন্দ, খুশি ও ভালোবাসার উৎসব। ধনী-গরিব, ছোট-বড়—সবাই মিলে উদ্যাপন করে দিনটি। ঈদের মূল সৌন্দর্য হলো সাম্যের বার্তা, যেখানে সবাই ভেদাভেদ ভুলে এক কাতারে শামিল হয়। ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে, ঈদের আনন্দ যেন সবার হয়। জাকাত ও ফিতরার মাধ্যমে দরিদ্ররাও ঈদ আনন্দে অংশ নেয়, এতে ঈদ হয়ে ওঠে মানবতার উৎসব। ঈদের আগের রাত থেকেই উৎসবের আমেজ শুরু হয়। চাঁদ দেখা, নতুন পোশাক, হাতে মেহেদি—সবকিছুতেই আনন্দের ছোঁয়া। ঈদের সকালে নামাজ আদায়, শুভেচ্ছা বিনিময়, কোলাকুলি—এসবের মধ্য দিয়ে ভালোবাসার সেতু গড়ে ওঠে।
বর্তমানে ডিজিটাল মাধ্যমে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় জনপ্রিয় হলেও প্রকৃত আনন্দ আসে, যখন সবাই একসঙ্গে হাসি ভাগ করে নেয়। ঈদ শুধু উৎসব নয়, এটি ভালোবাসা, সংযম ও মানবতার প্রতিচ্ছবি। আসুন, ঈদের খুশি সবার মাঝে ছড়িয়ে দিই, যাতে প্রতিটি জীবন সত্যিকারের আনন্দে রঙিন হয়ে ওঠে।
তানজিল কাজী, শিক্ষার্থী, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি
ঈদ: ধর্মীয় উৎসবের আনন্দ ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য
ঈদ মুসলমানদের অন্যতম প্রধান উৎসব। বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে এটি আনন্দঘন পরিবেশে উদ্যাপিত হয়। বাঙালিদের জন্য ঈদ শুধু ধর্মীয় উৎসব নয়, এটি সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রতিচ্ছবি। ঈদের সকাল শুরু হয় নামাজ আদায় করার মধ্য দিয়ে। মসজিদ কিংবা খোলা ময়দানে মুসল্লিদের সমাবেশ এক অনন্য দৃশ্য সৃষ্টি করে। নামাজ শেষে শুভেচ্ছা বিনিময়, কোলাকুলি—সবই ঈদের আবেগঘন অংশ। ঈদের অন্যতম আকর্ষণ নতুন পোশাক ও সুস্বাদু খাবার। ফিরনি, সেমাই, বিরিয়ানি, পিঠা—এসব ছাড়া যেন ঈদের আনন্দ অপূর্ণ থেকে যায়। আত্মীয়দের আমন্ত্রণ, মেহমানদারি ঈদের আনন্দ বাড়িয়ে দেয়। ঈদ পারিবারিক বন্ধন দৃঢ় করার সুযোগ। বড়দের সালাম, ছোটদের উপহার, অসহায়দের সহায়তা—সবকিছুই ঈদের উৎসবকে প্রাণবন্ত করে। জাকাত ও কোরবানির মাধ্যমে সমাজে সমতা ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ঈদ ব্যক্তিগত নয়, সমষ্টিগত উৎসব। ঈদ মেলা, বিশেষ টিভি অনুষ্ঠান সব বয়সী মানুষের জন্য আনন্দের বার্তা বয়ে আনে। বাঙালি মুসলিমদের জন্য ঈদ ধর্মীয় উৎসবের পাশাপাশি এক বৃহত্তর সামাজিক মিলনমেলা, যা ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বার্তা বহন করে।
আয়েশা সিদ্দিকা মিষ্টি, শিক্ষার্থী, ল অ্যান্ড ল্যান্ড ম্যানেজমেন্ট বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
রমজানের ঈদের আয়োজন ও প্রস্তুতি
ঈদ মানেই আনন্দ, উৎসব ও ইবাদতের সমন্বয়। রোজা পালন, বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার, তারাবির নামাজ, পড়াশোনার ফাঁকে ঈদের জন্য পরিকল্পনা করতে হয়। প্রথমে থাকে পরিবারের জন্য কেনাকাটা। বাজেট সীমিত হলেও সবার জন্য ছোটখাটো উপহার কিনি, নিজের জন্য নতুন পোশাক নিই এবং দান-সদকার জন্য কিছু অর্থ রাখি। ঈদে জামা-পাঞ্জাবি ও জুতা কেনা হয়। রান্নার বিষয়েও মায়ের পাশে দাঁড়াই। ঈদের সকালে সেমাই, পোলাও, মাংস—সবকিছুর আয়োজন থাকে। বাবার সঙ্গে বাজার করা, মাকে রান্নায় সহায়তা করাও আনন্দের অংশ। ঈদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা করা, কবর জিয়ারত ও অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো। সব মিলিয়ে ঈদ শুধু আনন্দ নয়, বরং পরিবার ও সমাজের জন্য কিছু করার এক অনন্য সুযোগ।
তাওহীদ আহমেদ, শিক্ষার্থী, রসায়ন বিভাগ, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়
স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার
প্রাণের ক্যাম্পাস ছেড়ে মাতৃক্রোড়ে ফেরা সন্তানের জন্য ঈদ হলো শ্রেষ্ঠ সময়। বাবা-মায়ের অপেক্ষা, জমিয়ে রাখা কথা—সবকিছুই মিশে যায় ঈদের আনন্দে। মায়ের ভালোবাসার স্পর্শে ঈদের সকালের মিষ্টিমুখ যেন সবচেয়ে বড় পাওয়া। তবে অনেক শিক্ষার্থীকে নানা কারণে ক্যাম্পাসেই ঈদ কাটাতে হয়। তাদের একাকিত্ব কাটে মসজিদে নামাজ পড়ে, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটিয়ে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়ায় শুভেচ্ছা বিনিময় করে। তবু ঈদ আনন্দ ছড়ায়, মুসলিম উম্মাহকে একত্র করে। ধনী-গরিব ভেদাভেদ ভুলিয়ে, বৈরিতা দূর করে নিয়ে আসে মমতার বার্তা। ঈদের গল্প হয়ে ওঠে কারও জন্য আনন্দের, কারও জন্য নিঃসঙ্গতার। বাস্তব জীবনেও ধনী-দরিদ্রের ভেদাভেদ ভুলিয়ে ঈদ হোক আরও প্রাণবন্ত। ঈদুল ফিতর আমাদের আনন্দে রাঙিয়ে দিক, গাজার ধু ধু প্রান্তরেও বয়ে আনুক শান্তির সুবাতাস—এই আমাদের কামনা।
সামিহা সিরাজী লাজ, শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়