Ajker Patrika
হোম > বিনোদন > বলিউড

হেমা থেকে লতা হওয়ার গল্প 

জাহীদ রেজা নূর

হেমা থেকে লতা হওয়ার গল্প 

৯২ বছর বয়সে শেষ হলো পথচলা। লতা মঙ্গেশকর আর নেই। দীর্ঘ চার সপ্তাহ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। কোভিড কেড়ে নিল তাঁকে। নিউমোনিয়ায়ও আক্রান্ত ছিলেন।‌ ফলে কোভিড নেগেটিভ হওয়ার পরও লড়াইটা চালিয়ে যেতে পারেননি।

বর্ণাঢ্য জীবন লতার। লড়াই করেই বড় হতে হয়েছে তাঁকে। তাঁর মিষ্টিমধুর কণ্ঠে মাতোয়ারা ছিল সংগীতপ্রেমী মানুষ। কণ্ঠে জাদু ছিল তাঁর।

এক মারাঠি পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি, ১৯২৯ সালে। নাম ছিল তাঁর হেমা। কিন্তু বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর সেই নাম পরিবর্তন করে রাখেন লতা। ‘ভব বন্ধন’ নামে একটি নাটক ছিল, যার একটি চরিত্রের নাম ছিল লতিকা। সেই থেকে লতা।

বাবাকে বেশি দিন পাননি লতা। মাত্র ১৪ বছর বয়সে বাবার চলে যাওয়া দেখেছিলেন। ‌হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছিলেন তিনি। বড় এক সংসার, তাই বড় বোন হিসেবে সংসারের হাল ধরতে হয়েছিল লতাকে।

১৯৪২ সালে মারাঠি ছবি ‘কিতি হাসাল’-এ প্রথম গান করেছিলেন লতা। শুরুটা যে খুব ভালো ছিল তা নয়। যখন প্রথম সংগীত পরিচালক গুলাম হায়দার তাঁকে পরিচালক শশধর মুখার্জির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন, তখন লতার গান শুনে তিনি বলেছিলেন, ‘বেশি চিকন গলা। এমন কণ্ঠ প্লেব্যাকের জন্য নয়।’

সে কথা মানেননি গুলাম হায়দার। বলেছিলেন, ‘একদিন পরিচালকেরা এই মেয়ের পায়ে পড়ে তাকে তাদের চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার জন্য ভিক্ষা করবে।’ গুলাম হায়দার কোত্থেকে এত বড় সত্য উচ্চারণ করার শক্তি পেয়েছিলেন, সেটা ভেবে অবাক হতে হয়।

লতার প্রথম উপার্জন ছিল ২৫ রুপি। ছোটখাটো কাজ করে বড় হচ্ছিলেন তিনি। এর মধ্যে ১৯৪৮ সালে ‘মজবুর’ ছবিতে প্রথম বড় একটা সুযোগ পান লতা মঙ্গেশকর। এরপর থেকে লতা হয়ে উঠলেন গানের রানি, নাম দেওয়া হলো সুরসম্রাজ্ঞী।

জীবনে কত যে পুরস্কার পেয়েছেন লতা, তার হিসাব নেই। ১৯৮৯ সালে ভারত সরকার তাঁকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কারে ভূষিত করে। ২০০১ সালে ভারতের সর্বোচ্চ সম্মাননা ভারতরত্নে ভূষিত হন তিনি। ‌২০০৭ সালে ফরাসি সরকার তাঁকে ফ্রান্সের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা লেজিও দনরের অফিসার খেতাবে ভূষিত করে।

পদ্মশ্রী, পদ্মভূষণ তো আগেই পেয়েছেন। হিন্দিসহ ৩৬টি আঞ্চলিক ভাষা ও বিদেশি ভাষায় গান গিয়েছিলেন তিনি।

পরিবারের কথা একটু বলি। বাবা দীননাথ মঙ্গেশকরের কথা আগেই বলা হয়েছে। মায়ের নাম শিবন্তী মঙ্গেশকর। লতার তিন বোন এক ভাই। আশা ভোঁসলে, ঊষা মঙ্গেশকর, মিনা মঙ্গেশকর ও এক ভাই হৃদয়নাথ মঙ্গেশকর।

বাবা দীননাথ মঙ্গেশকর ছিলেন পণ্ডিত ব্যক্তি। মারাঠি ও কংকিনি সংগীতজ্ঞ। মঞ্চে অভিনয় করতেন। 

লতা মঙ্গেশকরের সুপারহিট গান আছে অসংখ্য। ক্যারিয়ারের শুরুর দিকের দুটি গান উল্লেখ করা অন্যায় হবে না। ‘জিয়া বেকারার হ্যায়’ (১৯৪৯), ‘মন দোলে মেরা তান দোলে’ (১৯৫৫)। এরপর থেকে তিনি তো যেকোনো ধরনের গানে অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। ভাব অনুযায়ী গানকে তৈরি করে নেওয়ার আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল লতার। যেকোনো বয়সের নায়িকার কণ্ঠের সঙ্গে মানানসই করে তিনি গেয়ে যেতে পারতেন। সে প্রায় প্রৌঢ় নার্গিস হোক আর কিশোরী ডিম্পল হোক, মানিয়ে যেত কণ্ঠ।

বাংলা গানের জগতে লতা মঙ্গেশকরের তুলনা মেলা ভার। ‘রঙ্গিলা বাঁশিতে কে ডাকে’, ‘নিঝুম সন্ধ্যায়’, ‘বাঁশি কেন গায়’, ‘আজ মন চেয়েছে আমি হারিয়ে যাব’ ছাড়াও কত গানে মোহিত হয়েছে বাংলা!

কিছুদিন আগে পদ্মশ্রী পদক প্রত্যাখ্যান করা সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে লতা মঙ্গেশকরের ছিল খুবই হার্দিক সম্পর্ক। ভারতের কোকিলকণ্ঠী এই সংগীতশিল্পীর জীবনাবসান একটি বিশাল প্রাণচঞ্চল জীবনকে ইতিহাসে পরিণত করল।

জাহীদ রেজা নূর: উপসম্পাদক, আজকের পত্রিকা

লতা মঙ্গেশকর সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

‘ডন থ্রি’ ছাড়ছেন কিয়ারা

মিকা সিংয়ের কত সম্পদ!

আর ভিলেন হবেন না ববি দেওল

সোশ্যাল মিডিয়া থেকে মেয়ের সব ছবি সরিয়ে ফেললেন আলিয়া

অবসরের রহস্য ভাঙলেন অমিতাভ বচ্চন

পরিবার নিয়ে মান্নাত ছাড়ছেন শাহরুখ

যে শর্তে বিয়ে করতে রাজি সুস্মিতা সেন

আমিরের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে এসেছিল পাইরেসি!

কাপুর পরিবারে এখন সবচেয়ে ধনী আলিয়া

অমিতাভ বচ্চনের জামাইয়ের বিরুদ্ধে প্রতারণা ও আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ