একসময় লাইট, ক্যামেরায় বিএফডিসির প্রতিটি জায়গা মুখরিত থাকলেও, এখন তা সুদূর অতীত। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)তে কমে গেছে সিনেমার শুটিং। রুগ্ণ অবস্থায় ধুকে ধুকে চলছে প্রতিষ্ঠানটি! এর সঙ্গে জড়িত থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিস্থিতও এখন এমন। গত চার মাস ধরে বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন এফডিসির ২১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী।
দুদিন পরই শুরু হচ্ছে পবিত্র মাহে রমজান। এরপরই ঈদুল ফিতর। বেতন ভাতা না পাওয়ায় অনিশ্চয়তায় মধ্যে পড়তে যাচ্ছেন বিএফডিসির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। উপায় না পেয়ে বেতন-ভাতার দাবিতে আগামীকাল মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীরা। জহির রায়হান কালার ল্যাবের সামনে আগামীকাল সকাল ১১ টায় মানববন্ধনের ডাক দিয়েছে বিএফডিসির কলাকুশলী ও কর্মচারী লীগ।
সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক আহসান হাবীব আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের আর বলার ভাষা নেই। প্রায় পাঁচ মাস ধরে বেতন পাচ্ছি না। বাসা ভাড়া থেকে বাচ্চাদের স্কুল-কলেজের বেতন। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের চিকিৎসা, ওষুধসহ সব আটকে আছে। বলা যায়, আমরা পালিয়ে বেড়াচ্ছি সবখান থেকে। তাই উপায় না পেয়ে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধনের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন জানাব।’
বেতন অনিশ্চিত হওয়ার পেছনে মূল কারণ বিএফডিসির আয় কমে যাওয়া। একসময়ের লাভজনক প্রতিষ্ঠানটি সরকারের রাজস্বেও জোগান দিত। কিন্তু বর্তমানে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিতে পারছে না। ৩৫ মিলিমিটারে (সেলুলয়েড) সিনেমা নির্মাণের সময় কাঁচা ফিল্ম বিক্রয় বা ল্যাব প্রিন্ট থেকে বড় আয় হতো বিএফডিসির। ডিজিটাল প্রযুক্তি আসার পর সে আয়ের পথ এখন পুরোপুরি বন্ধ। এ ছাড়া বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণে তিনটি ফ্লোর ভেঙে ফেলাতেও প্রতিষ্ঠানটির আয় কমেছে।
প্রতিষ্ঠানটির প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা হিমাদ্রি বড়ুয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘কর্মচারীরা মানববন্ধনের ডাক দিয়েছেন। আমরাও চাই এই সংকটের সমাধান। আমরা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছি, আমাদের এমডি যথেষ্ট আন্তরিক। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি যাতে দ্রুত এ সংকট সমাধান হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সবশেষ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের জন্য বিএফডিসির কিছু জায়গা অধিগ্রহণ বাবদ সরকার ৬ কোটি টাকা প্রদান করে এফডিআর করে রাখে। ওই এফডিআর থেকে ঋণ নিয়ে গত ৮ মাস যাবৎ এর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করা হয়। ঋণের পরিমাণ এফডিআর’র কাছাকাছি হওয়ায় এখন ঋণ নেওয়ার আর সুযোগও নেই। ফলে গত চার মাস ধরে বকেয়া পড়েছে বেতন-ভাতা।’
শুধু বেতন নয়, গত চার-পাঁচ বছরের অবসরে যাওয়া বিএফডিসির প্রায় ৭০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী তাদের ছুটি নগদায়ন এবং গ্র্যাচুইটি বাবদ পাওনা প্রায় ১৫ কোটি টাকা এখনো বুঝে পাননি। এর মধ্যে মারা গেছেন ৮ জন। তাদের পরিবার দিনের পর দিন অর্ধাহারে, অনাহারে জীবন কাটাচ্ছে। অর্থের অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা।
উল্লেখ্য, এর আগে ২০১৫ সাল থেকে ব্যাংকে থাকা এফডিসির এফডিআর ভাঙিয়ে বেতন ও যাবতীয় খরচ নির্বাহ করা হতো। একসময় এফডিআর শেষ হয়ে যাওয়ায় সরকারি প্রণোদনায় কিছুদিন ব্যয় নির্বাহ করা হয়েছিল। গত বছরের এপ্রিলেও চার মাসের বকেয়া বেতন পরিষদের দাবিতে এফডিসির কলাকুশলী ও কর্মচারীরা বিএফডিসির এমডি নুজহাত ইয়াসমীন বরাবর বেতন-ভাতার দাবিতে স্মারকলিপি প্রদান করেন।